ইরাভিকুলাম ন্যাশনাল পার্কের ভিতরেই অবস্থিত দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ আনামুদি। তোমরা এদিকে বেড়াতে এলে অবশ্যই দেখো মুন্নার শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাত্তুপেটি হ্রদ।
ইরাভিকুলাম ন্যাশনাল পার্কের ভিতরেই অবস্থিত দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ আনামুদি। তোমরা এদিকে বেড়াতে এলে অবশ্যই দেখো মুন্নার শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাত্তুপেটি হ্রদ।
ঘুম ভাঙলো অতি ভোরে, পাশের ঘরের টুরিস্টদের প্রবল চিৎকারে। দ্রুত গরম পোশাক জড়িয়ে বাইরে আসি। সে এক অনির্বচনীয় দৃশ্য। আকাশ যেখানে মাটির সঙ্গে মিশেছে, সেখানটায় এখনও ঘোর অন্ধকার। তার একটু ওপর থেকে অন্ধকার ফিকে হচ্ছে আর আগুনের শিখার মতো লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছে দিগন্ত জুড়ে।
আমরা তো শুনে বাক্যহারা। ঘরে আমরা, দরজার বাইরে তেনারা! বাইরে বেরিয়ে জুতো পায়ে গলাতে গিয়ে দেখি বেশ গরম। তেনারা তাহলে জুতোর ওপর বসেই গল্প করছিলেন!
ততক্ষণে অন্ধকার নেমেছে চরাচর জুড়ে। পাখির দল বাসায় ফিরে এসেছে। গাছে গাছে শোনা যাচ্ছে তাদের কিচিরমিচির। ডিনারে রুটি চিকেন খেয়ে কম্বলের আশ্রয়ে যখন ঢুকলাম, তখন ঝিঁঝিঁর ডাক ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই।
পরবর্তী গন্তব্য ছিল ঐতিহাসিক আগুয়াডা ফোর্ট। ২০০ বছরের পুরোনো এই ফোর্ট তৈরি করে পর্তুগিজরা। ‘আগুয়াডা’ শব্দের পর্তুগিজ অর্থ হল জলে ঘেরা ভূমি।
গাইড আমাদের একে একে দেখালেন মুকুলের বাড়ি, গিরিধারীর বাড়ি, মুকুলের হোলিখেলার জায়গা, আরো কত কী ! মনে হচ্ছিল সোনার কেল্লা যেন জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে আমাদের চোখের সামনে।
গোল্ডেন বিচে দোকানপাট নেই। পরিচ্ছন্ন বালুকাবেলায় ঘুরে বেড়াতে বেশ লাগছিল। আর ঠিক তখনই অস্তগামী সূর্য তার সবটুকু রঙ ঢেলে দিলো চরাচর জুড়ে। মুগ্ধ হয়ে দেখলাম। সঙ্গে চলল ফটো সেশন! খুদে সদস্যটির আনন্দ দেখে কে !
প্রায় আড়াই কিলোমিটার হেঁটে পাহাড়ের মাথায় উঠে পৌঁছে গেলাম 'ধরমঘর'। একশো বছরেরও বেশি আগে, স্বামীজি ধ্যানে বসেছিলেন এখানেই।
মন্দিরে ওঠার ক্ষেত্রে বেশ মজার নিয়ম চালু এখানে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠা আর পাহাড় বেয়ে নামা। যতই কষ্ট হোক, নিয়ম মেনেই দর্শন করতে হবে। যেতে যেতে দেখি, পাহাড়ের এধার-ওধার থেকে বাঁদর ও হনুমান পরিবারের আনাগোনা।
পুরো শহরটি দুভাগে বিভক্ত, আপার ও লোয়ার পেডং। আগেই বলেছি গির্জা, গুমফা, দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি নিয়ে পেডং দাঁড়িয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। এবার পরপর সেইসব দর্শন।
বিপুল বেগে জলরাশি কোথা থেকে দৌড়ে এসে ঝরে পড়ছে। তারপর একটু ঝুঁকে দেখি, সে আরো বিপুল বেগে আরো নিচের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কোথায় যেন ছুটে চলেছে। বাকরুদ্ধ হয়ে কতক্ষণ যে কেটে গেল।
মাথার ওপর নীল আকাশের সামিয়ানা। সেখানে সাদা মেঘের ভেলায় ভাসমান শরতের অমল আনন্দ। পিছনে উঁচু পর্বতমালা খাড়া দাঁড়িয়ে, তারপর পাইনের ঘন সারি, সামনে ছড়ানো বিস্তৃত উপত্যকায় ছোট ছোট গ্রাম। তারই একটি এই সিলেরি গাঁও।
শিলংয়ে রয়েছে অজস্র ঝর্না, সৌধ ও অন্যান্য দর্শনীয় স্থান, যা পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। ব্রিটিশ আমলে সাহেবরা অবসর কাটাতে আসত এই শহরে। শিলং শহরকে ভালোবেসে ‘প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড‘ নামকরণ করেছিল তারা।
নদীগুলি এককথায় জল থইথই। উত্তরবঙ্গের প্রকৃতি এমনিতেই অপরূপ। এখন বৃষ্টির জলে সিক্ত গাছেদের রূপ যেন আরও খুলেছে। আমাদের গন্তব্য জলদাপাড়া–না, সরাসরি অভয়ারণ্য নয়, আমরা থাকব জঙ্গলের বাইরের এক গ্রামে, খুব সুন্দর এক নদী সীসামারার পাড়ে এক রিসর্টে। নদীর নামেই এলাকার নামও সীসামারা।
অসংখ্য নদী এদিক-ওদিক থেকে মাকড়সার জালের মত এসে মিশেছে৷ কোন নদী কোথা থেকে কার সঙ্গে এসে মিশেছে, তা বোঝার জন্য দুদিন একেবারেই যথেষ্ট নয় বেশ বোঝা গেল৷
সুন্দরভাবে বাঁধানো এই সরোবরের স্ফটিক-স্বচ্ছ জলে খেলা করছে বিশাল আকৃতির এক একটি রঙিন মাছ। সরোবরের কিনারায় দাঁড়ালেই মাছের দল ছুটে আসে আর তাদের টুকটাক খাবার দিলে চঞ্চল জলকেলি করে বুঝিয়ে দেয় নিজেদের খুশি। এই সরোবরকে ঘিরেই রয়েছে পরিক্রমা পথ, যেখানে যথা নিয়মে পরিক্রমা করছেন শিখ ভক্তবৃন্দ।
পরদিন ভোরে যখন বেড়াতে বের হলাম, বাতাসে তখনও শীতলতা যথেষ্ট। এখানে ভূপ্রকৃতির দুটি অদ্ভুত খেয়ালের দেখা পাওয়া যায়। প্রথমটি জলজলি পয়েন্ট বা বাউন্সিং ল্যান্ড। রাস্তা থেকে খানিকটা সিঁড়ি নামলে একটা বিশাল সবুজ মাঠ।
ছোটো ছোটো কাঠের কটেজে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা। তেমনই একটি ঘরে ব্যাগপত্র রেখে, ফ্রেশ হয়ে ঘরের সামনের ছোটো বারান্দায় এসে বসলাম। চা দিয়ে গেল রিসর্টে কর্মরত ছেলেটি।
গন্তব্য কমলা গ্রাম সিটং-এ। কমলালেবু চাষ থেকে এহেন কমলা গ্রাম খেতাব। তোমাদের প্রিয় দার্জিলিংয়ের কমলালেবুর অনেকটাই এই উত্তরবঙ্গের সিটং থেকে মেলে। যেতে যেতে দেখলাম খোলা আকাশের নিচে ছড়ানো প্রান্তরে কমলা শুকোনো হচ্ছে রোদে।
সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ। ঝোড়ো হাওয়াও বইছে। আর তাতেই যেন আরও খুলেছে সমুদ্রের রূপ! আজই আমরা এসেছি তাজপুর বলে একটি ছোট্ট গ্রামে।
ভারতের দক্ষিণ প্রান্তের শেষ ভূখণ্ড কন্যাকুমারী। তিন-তিনটি সমুদ্র এসে তার পায়ে লুটিয়ে পড়েছে–বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর আর ভারত মহাসাগর। সে এক অবর্ণনীয় দৃশ্য !
একটু আগেই পূর্ব আকাশ লাল করে ঢেউয়ের রাশি ছুঁয়ে, উঠে এসেছে দিনের প্রথম সূর্য। তারও আগে হলিডে হোমের দরজায় গাড়ির হর্ন বাজিয়েছে গাড়ির ড্রাইভার।
সে এক অঝোর বৃষ্টিঝরা সকাল। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমেছি। গন্তব্য উত্তরবঙ্গের দাওয়াই পানি বলে এক ছোট্ট গ্রাম। গাড়ি রিজার্ভ করা ছিল।…