ছোটোদের চাঁদের হাসি / হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা / মে ২০২৫

পর্যটনের স্বর্গরাজ্য গোয়া

 

আমাদের অতি চেনা দিঘা বা পুরী গেলে আমরা বঙ্গোপসাগরের দেখা পাই। এবার তোমাদের নিয়ে যাব আরবসাগরের তীরে। গোয়ার নাম তোমরা নিশ্চয়ই শুনেছ।  আরবসাগরের তীরে অবস্থিত এই শহর যেন এক টুকরো স্বপ্নপুরী। পর্যটনের স্বর্গরাজ্য হলো গোয়া। সারা পৃথিবী থেকে পর্যটকরা নীলাভ আরব সাগরের ঢেউ, সুন্দর সুন্দর বিচ, চার্চ, ফোর্ট আর জঙ্গলের টানে সেখানে ছুটে যায় বছরভর। উত্তরে মহারাষ্ট্র, পূর্ব আর দক্ষিণে কর্ণাটক এবং পশ্চিমে আরবসাগর–তারই তীরে প্রকৃতির রূপসুধা নিয়ে দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষের ছোট অঙ্গরাজ্য গোয়া।

 

ইতিহাস বলছে, ১৯৮৭ সালে গোয়া ভারতের রাজ্যের মর্যাদা পায়। আরবসাগরের তীরে বেশ কিছু বিচ বা সমুদ্রসৈকত আছে। তারমধ্যে ভাগাতর, কালাঙ্গুটে, বাগা, ক্যান্ডোলিম  বিচগুলোতেই পর্যটকদের ভিড় বেশি চোখে পড়ে। আর নিরিবিলিতে সময় কাটাতে চাইলে বেছে নিতে হবে বাটারফ্লাই আর কাকোলেম বিচ। তবে, গোয়ার প্রতিটা বিচই আলাদা করে আকর্ষণীয়।

 

 

এবার তোমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব গোয়া ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা। কলকাতা থেকে বিমানে মোটামুটি দু ঘন্টা পঞ্চাশ মিনিটে গোয়ার ডাবলিম এয়ারপোর্টে পৌছলাম। সেখান থেকে প্রিপেড ট্যাক্সিতে গেলাম আমাদের আগে থেকে বুক করা গোয়া ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টের ‘কালাঙ্গুটে রেসিডেন্সি’তে। একেবারে সি বিচের কাছেই হোটেলটি। ঘরে বসেই সমুদ্র উপভোগ করার জন্য আদর্শ। জায়গাটিও বেশ জমজমাট। চারদিকে নানারকম দোকান, জামাকাপড় থেকে খাবারদাবার কী নেই সেখানে। তবে, রাত দশটার পরে সব নিঃশব্দ, তখন শুধুই সমুদ্রের গর্জন। 

 

গোয়ার বিপুল পরিচিতির অধিকাংশ জুড়ে আছে নর্থ গোয়া। একটি গাড়ি রিজার্ভ করে, প্রথমে যাওয়া হলো সেখানেই। ড্রাইভার প্রথমেই নিয়ে গেলেন ডলফিন অ্যাডভেঞ্চারে। নৌকো করে বেশ গভীর সমুদ্রে নিয়ে যায় ডলফিন দেখানোর জন্য। যদিও ডলফিন দেখা অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। সব সময় দেখা নাও মিলতে পারে। তবে জলপথে লাইটহাউস, আগুয়াডা ফোর্ট এমনকী জেলখানা দেখার অভিজ্ঞতাও বেশ আনন্দদায়ক।

 

 

পরবর্তী গন্তব্য ছিল ঐতিহাসিক আগুয়াডা ফোর্ট। ২০০ বছরের পুরোনো এই ফোর্ট তৈরি করে পর্তুগিজরা। ‘আগুয়াডা’ শব্দের পর্তুগিজ অর্থ হল জলে ঘেরা ভূমি। আরব সাগরের তীরে এই ফোর্টের  দুটো অংশ–আপার ফোর্ট ও লোয়ার ফোর্ট। ঘুরে দেখতে বেশ খানিকটা সময় লাগে। ঘুরে দেখলাম খানিকটা দূরে অবস্থিত আগুয়াডা মিউজিয়াম।  এরপর গেলাম চাপোড়া ফোর্ট, এর চারদিকেই সমুদ্র।

 

পরদিনও নর্থ গোয়ায়–ঘুরে দেখলাম শান্তা দুর্গা মন্দির, মঙ্গেশি মন্দির। শান্তা দুর্গা মন্দির গোয়ার বৃহত্তম মন্দির। ইন্দো-পর্তুগিজ স্থাপত্য-শৈলী বহন করে চলেছে এই মন্দির। মন্দিরের সামনে আছে বাতিস্তম্ভ, অন্যদিকে শিবকে উৎসর্গ করে তৈরি হয়েছে মঙ্গেশী মন্দির। আরও দু একটি বিচ ঘোরাঘুরি করে সেদিনের মতো হোটেলে ফিরলাম।

 

 

তৃতীয় দিন গেলাম ওল্ড গোয়া। গোয়ার ঐতিহ্য জানতে হলে, এখানে যেতেই হবে। গাড়ি করে যাওয়ার পথে যে সব ঘরবাড়ি, গির্জা নজরে এলো, সবকিছুর মধ্যে পর্তুগিজ যুগের ছাপ স্পষ্ট। প্রথম গেলাম ব্যাসিলিকা অফ বম জেসাস। এই গির্জাটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর ঠিক উল্টোদিকে আছে ক্যাথিড্রাল–এশিয়ার সবচেয়ে বড় গির্জা।

 

এখান থেকে গেলাম তিরুপতি বালাজি মন্দিরে। সেখান থেকে গেলাম স্পাইস গার্ডেন বা মশলার বাগানে। প্রবেশপথে মহিলারা পুষ্প বর্ষণ করে কপালে টিপ পরিয়ে বরণ করে নিল। সঙ্গে ওয়েলকাম ড্রিংকসে ছিল হার্বাল চা। গাইড পুরো বাগান ঘোরানোর সঙ্গে নানারকম মশলা গাছের সঙ্গে পরিচয় করালেন। ওখান থেকে মশলা কিনলামও–একেবারে  খাঁটি মশলা। এছাড়া ছিল ওখানকার মশলা দিয়ে তৈরি নানারকম খাবার। সাউথ গোয়ায় মুলত সি বিচ আর নানারকম স্পোর্টসের ব্যবস্থা আছে। সূর্যাস্ত দেখার জন্য গেলাম পাওলেলেম বিচ। এখান থেকে নৌকো করে যাওয়া যায় বাটারফ্লাই বিচ।

 

 

কলকাতা এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি বিমানে অথবা ট্রেনে অমরাবতী এক্সপ্রেসে যাওয়া যায় গোয়া–শালিমার স্টেশন  থেকে ছাড়ে এই গাড়ি। যাওয়ার জন্য অক্টোবর থেকে জানুয়ারি সেরা সময়। গোয়ার খাবারদাবারের স্বাদ অসাধারণ। তোমরা গেলে অবশ্যই চেখে দেখো।

 


পাঠকদের মন্তব্য

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up