ছোটোদের চাঁদের হাসি / হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা / এপ্রিল ২০২৫

জয়সলমীরে সোনার কেল্লা

 

তোমরা অনেকেই নিশ্চয়ই ‘সোনার কেল্লা‘ দেখেছ ! ছোট্ট ছেলে মুকুলকে মনে আছে তো ? সেই মুকুল, যে কিনা জাতিস্মর, পূর্বজন্মের কথা হুবহু মনে করতে পারত। তাকে নিয়েই সত্যজিৎ রায় লিখেছিলেন বিখ্যাত গল্প ‘সোনার কেল্লা’। আর সেই গল্প নিয়েই এই সিনেমা। এবার তোমাদের শোনাব সেই সোনার কেল্লা দেখার গল্প। রাজস্থানের ছোট্ট শহর জয়সলমীর, সিনেমার পর্দায় সোনার কেল্লা তৈরি হয়েছিল এই শহরকে কেন্দ্র করেই। রাজস্থান মানেই তো শুধুই কেল্লা আর প্রাসাদ। এককথায় রাজা-রাজড়ার এলাকা। তবে, জয়সলমীরের প্রধান আকর্ষণ সোনার কেল্লা। তোমাদের জানাই, এই কেল্লার আসল নাম হলো ত্রিকূট দুর্গ। সত্যজিৎ রায়ের ছবির দৌলতে এখন অবশ্য কেল্লাটি সোনার কেল্লা নামেই পরিচিত।

 

আমরা প্রথমে ট্রেনে চেপে পৌঁছলাম রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে। সেখানে দুদিন থেকে গাড়িতে গেলাম জয়সলমীর। এবার বলি, কেমন দেখতে সোনার কেল্লা ! দুর্গটি হলুদ পাথরের বিশাল বিশাল ব্লক দিয়ে তৈরি। পুরো দুর্গের কোথাও চুন বা মর্টার ব্যবহার করা হয়নি। কেবল সোনালি রঙের পাথরের চাই একের পর এক সাজিয়ে বা খাঁজ দিয়ে স্থাপিত হয়েছে এই দুর্গ, যার উপরে সূর্যের আলো পড়লে সত্যি সত্যি সোনার কেল্লা বলেই মনে হয়।

 

 

১১৫৬ সালে রাজপুত রাওয়াল এই দুর্গ নির্মাণ করেন। আরও একটি তথ্য তোমাদের জানিয়ে রাখি, এটি হলো বিশ্বের বিরল দুর্গগুলির অন্যতম, যেখানে পুরোনো শহরের জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ এখনও দুর্গের মধ্যে বসবাস করে। সোনার কেল্লার মধ্যে যেমন রয়েছে জনবসতি, তেমনই রয়েছে অসংখ্য দোকানপাট। সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লা ছবির স্মৃতি এখনও নীরবে বহন করে চলেছে ত্রিকূট দুর্গ। গাইড আমাদের একে একে দেখালেন মুকুলের বাড়ি, গিরিধারীর বাড়ি, মুকুলের হোলিখেলার জায়গা,  আরো কত কী ! মনে হচ্ছিল সোনার কেল্লা যেন জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে আমাদের চোখের সামনে।

 

 

জয়সলমীরে অবশ্য সোনার কেল্লা ছাড়া আরও অনেক দ্রষ্টব্য রয়েছে। এর মধ্যে অবশ্যই দেখার জেটেনহাবে পাটওয়া কে হাভেলি, বড়া বাগ, জৈন টেম্পল। জয়সলমীরের আর এক বিরাট আকর্ষণ থর মরুভূমি। সূর্যাস্তের একটু আগে উটের পিঠে চড়ে কিছুক্ষণ ওখানে ঘুরে না বেড়ালে জয়সলমীর ভ্রমণ কিন্তু অসমাপ্ত থেকে যাবে। তোমরাও ওখানে বেড়াতে গেলে অবশ্যই উঠের পিঠে চড়ে দেখো। প্রথমে একটু ভয় ভয় করলেও একটু পরেই দেখবে, দিব্যি মজা লাগছে। উটের পিঠে চড়ে পৌঁছে যেতে পারো সানসেট পয়েন্টে। আমরাও গেলাম। মরুভূমির বুকে একটা রাত কাটানোর বিরল অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য থর মরুভূমিতে রয়েছে তাঁবুর ব্যবস্থা। তবে, আমাদের সূর্যাস্ত দেখেই তড়িঘড়ি ফিরতে হলো হোটেলে। কারণ, পরদিন সকালেই রওনা হতে হবে পরের গন্তব্যে। সেই গল্প আবার পরে কখনও বলব তোমাদের।

 


পাঠকদের মন্তব্য

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up