ছোটোদের চাঁদের হাসি / হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা / সেপ্টেম্বর ২০২৫

অপরূপ মুন্নার ও আলেপ্পি

 

ভারতের দক্ষিণ ভাগে ঠিক ক’টা রাজ্য আছে বলো তো? তোমাদের মধ্যে যারা জানো না, তাদের বলি, মোট পাঁচটি রাজ্য আছে ভারতের দক্ষিণ ভাগে–তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ আর তেলেঙ্গানা। প্রতিটি রাজ্যই রূপ-বৈচিত্র্যে অনন্য হলেও, কেরালা যেন একটু বেশিই সুন্দর। তাই তো একে বলা হয় ভগবানের নিজের শহর বা ‘গডস ওন সিটি’। এবার তোমাদের সেই কেরালা বেড়ানোর গল্প বলব। কেরালা রাজ্যটি আয়তনে যেমন বড়ো, তেমনই বৈচিত্র্য ও বৈভবে অসাধারণ ! কত কী যে দেখবার রয়েছে গুণে শেষ করা যাবে না। যাই হোক, পরিকল্পনা মতো বেরিয়ে পড়লাম। দমদম এয়ারপোর্ট থেকে যথাসময়ে প্লেন ছাড়ল। প্রথম গন্তব্য কোচি।

 

 

কোচি শহরে পৌঁছতে রাত ৯টা বাজল। কোচিতে খুব বেশি কিছু দেখার ছিল না। তাই সেখানে দু রাত থেকে আমরা রওনা হলাম মুন্নারের উদ্দেশ্যে। মুন্নারের যাত্রাপথটি অপূর্ব। পাহাড়ি পথ জুড়ে বিস্তৃত চা বাগান। দেখতে দেখতে ১৩০ কিলোমিটার পথ যে কখন কেটে গেল, বুঝতেই পারলাম না। মুন্নার কেরালার একমাত্র শৈল শহর, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫২০০ ফুট উপরে অবস্থিত। মুন্নারকে বলা হয়, দক্ষিণ ভারতের কাশ্মীর। মুথিরাপুরা, নাল্লাথাননি ও কুণ্ডলা এই তিনটি পার্বত্য নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত মুন্নার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অতুলনীয়। বিস্তৃত অঞ্চলে ইতস্তত ছড়ানো চা বাগিচা, পাক দিয়ে ওঠা রাস্তা শহরটিকে করে তুলেছে দৃষ্টিনন্দন ! এখানকার অরণ্যেই ফোটে সেই আশ্চর্য উদ্ভিদ, যার নাম নীলাকুরুঞ্জি। তোমরা জানলে অবাক হবে, এর ফুল প্রতি বারো বছরে একবার ফোটে। তারপর সেই ফুল পার্বত্য ভূমিকে একেবারে নীল রঙে মুড়ে দেয়।

 

 

এবার তোমাদের বলি মুন্নারে গেলে, কোথায় কোথায় যেতেই হবে। প্রথমেই বলব ইরাভিকুলাম ন্যাশনাল পার্কের কথা। ৯৭ কিলোমিটার বিস্তৃত এই পার্কটি ট্রেকিংয়ের জন্য দুর্দান্ত ! দুষ্প্রাপ্য প্রজাপতি, জন্তু এবং পাখিদেরও আশ্রয়স্থল এই পার্ক। তবে, এই পার্কের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ বিপন্ন প্রজাতির ‘নীলগিরি তেহর’(এক বিশেষ ধরনের বন্য ছাগল) ! ক্রমশ সংখ্যায় কমে আসছিল দেখে কেরালা সরকার সতর্ক হয়ে ওদের প্রতি যত্নবান হয়। এর ফলে এখন এদের সংখ্যা বেড়েছে এবং সহজেই দেখাও পাওয়া যাচ্ছে। ইরাভিকুলাম ন্যাশনাল পার্কের ভিতরেই অবস্থিত দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ আনামুদি। তোমরা এদিকে বেড়াতে এলে অবশ্যই দেখো মুন্নার শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাত্তুপেটি হ্রদ। চারপাশে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই হ্রদের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে নৌকাবিহারও করতে পারো তোমরা। মুন্নারের খুব কাছেই আছে চিন্নকনাল জলপ্রপাত। সবমিলিয়ে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্যরাজিতে সমৃদ্ধ এই স্থান।

                

 

মুন্নার থেকে আমরা গিয়েছিলাম আলেপ্পিতে। আলেপ্পির আসল নাম আল্লাপুজা। এর পশ্চিমে অবস্থিত মনোমুগ্ধকর আরব সাগর এবং এর ভূখণ্ডের মধ্যে রয়েছে বিস্তৃত হ্রদ, উপহ্রদ প্রভৃতি। আলেপ্পির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এর বিখ্যাত ব্যাক ওয়াটার। খাল, নদী এবং হ্রদের অপরূপ মানচিত্রের আলেপ্পিকে এই কারণেই প্রাচ্যের ভেনিস নামে অভিহিত করা হয়। আলেপ্পির ব্যাকওয়াটারের হাউজবোট ক্রুজে একরাত্তির কাটানোর মজাই  আলাদা। তোমরাও কিন্তু তোমাদের ট্রিপে হাউসবোটে রাত্রিবাসের পরিকল্পনাটা অবশ্যই রেখো।

 

 

প্রসঙ্গত, আলেপ্পিতে যে হাউসবোটগুলি  দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলি আদতে প্রাচীনকালের কেট্টুভাল্লামের নবতম সংস্করণ। কেট্টুভাল্লাম হলো কেরালার ঐতিহ্যবাহী এক প্রকারের হাউসবোট। মালায়ালাম ভাষায় ‘কেট্টু’ শব্দের অর্থ বেঁধে রাখা এবং ‘ভাল্লাম’ শব্দের অর্থ নৌকা। আগে এগুলি করে চাল, মশলা ইত্যাদি ভারী বস্তু বহন করা হতো। এখন অবশ্য বোটগুলি অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাউসবোটগুলিতে রয়েছে সাজানো-গোছানো শয়নকক্ষ, আরামদায়ক বৈঠকখানা, একটি রান্নাঘর, আধুনিক শৌচালয়–এককথায় একটি ভালো হোটেলের সমস্ত রকমের আরামদায়ক ব্যবস্থা। আলেপ্পি থেকে আরও কয়েকটি জায়গা ঘুরে আমরা কলকাতা ফিরে এলাম।

 


পাঠকদের মন্তব্য

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up