ছোটোদের চাঁদের হাসি / হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা / জানুয়ারি ২০২৪

স্মৃতিতে অমলিন ‘বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল’

 

ভারতের দক্ষিণ প্রান্তের শেষ ভূখণ্ড কন্যাকুমারী। তিন-তিনটি সমুদ্র এসে তার পায়ে লুটিয়ে পড়েছে–বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর আর ভারত মহাসাগর। সে এক অবর্ণনীয় দৃশ্য ! এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখাও এক অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতা! আমরা ছিলাম সাগরের ধারেই তামিলনাড়ু ট্যুরিজমের হোটেলে। কোচি থেকে কন্যাকুমারী পৌঁছতে বেশ রাত হয়ে গেছিল। কারণ, পথে আমরা কোভালাম ও পুয়ার বিচ দেখেছি। দুটিই অপরূপ।

 

যাই হোক, কন্যাকুমারী পৌঁছে, ফ্রেশ হয়ে হোটেলের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম। সামনের দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র তখন ঘন অন্ধকারে আচ্ছন্ন। তার মধ্যেই আলোর মালায় সাজানো দুটি জায়গা দৃষ্টি আকর্ষণ করল–বিবেকানন্দ রক এবং বিখ্যাত তামিল কবি থিরুভাল্লার মূর্তি। এই সেই বিবেকানন্দ শিলা, যেখানে ১৮৮২ সালের ২৭শে ডিসেম্বর বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ উত্তাল সমুদ্র সাঁতরে পৌঁছে গিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের নির্দেশে। টানা তিনদিন এই শিলার ওপর বসে তিনি ধ্যান করেন। এখানে বসেই তিনি রামকৃষ্ণ মিশন তৈরির কাজকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সে ব্যাপারে গভীর ভাবনা-চিন্তা করেন। ১৯৭০ সালে এই শিলার নামকরণ হয় বিবেকানন্দ রক (শিলা) মেমোরিয়াল।

 

 

পরদিন সকাল হলো অপরূপ সূর্যোদয় দেখে । সামনে অকূল সমুদ্র । কালো কালো ছোট ছোট নৌকো অনেক দূরে ঢেউয়ের মাথায় দুলছে। হোটেলের বাগানে অগুন্তি ময়ূর আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খরখর আওয়াজে পাশ ফিরে তাকাতে দেখি, একটা ময়ূর বারান্দার রেলিংয়ে মেলে দেওয়া তোয়ালে ধরে ঠোঁট দিয়ে টানছে। কী মজা যে লাগল দেখে! স্নান আর প্রাতঃরাশ সেরে আমরা চললাম বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল দর্শনে। তার আগে এপারে দেবী কন্যাকুমারীর মন্দির দর্শন। কথিত, এই মন্দিরটি প্রায় তিনহাজার বছরের পুরনো। তামিল ভাষায় দেবী আম্মান বা দেবী কন্যাকুমারী আসলে দেবী পার্বতী।

 

মূল ভূখণ্ড থেকে বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে লঞ্চে যেতে হয়। মাঝখানের দূরত্ব প্রায় পাঁচশো মিটার। আমরা তো টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়ালাম। লঞ্চের জেটিতে পৌঁছে আমাদের লাইফ-জ্যাকেট পরতে হলো। তারপর যাত্রা শুরু। সে এক দারুণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ! সমুদ্রের বিশাল বিশাল ঢেউ লঞ্চটাকে মোচার খোলার মতো ভাসিয়ে, লোফালুফি খেলছে। আর জল ছিটিয়ে একদম ভিজিয়ে দিচ্ছে আমাদের। লঞ্চের ভিতরও জলে হাবুডুবু অবস্থা। একটু যে ভয় করছিল না, সেটা বলব না। তবে, মজাও লাগছিল খুব।

 

 

ডাঙায় পৌঁছে দেখি, পাথরের পথ বেয়ে ঘুরে ঘুরে অনেকটা উঠতে হবে। এই রক মেমোরিয়ালে রয়েছে দুটো ভাগ–বিবেকানন্দ মণ্ডপম এবং শ্রীপদা মণ্ডপম। আর আছে দেবী কন্যাকুমারীর পায়ের ছাপ, স্থানীয় মানুষদের বিশ্বাস। শিলার চারদিকে ঘুরে ঘুরে সমুদ্রের বিশাল বিশাল ঢেউয়ের আছড়ে পড়া দেখলে ঘোর লেগে যায়। কী অশান্ত জলরাশি। কিন্তু অপূর্ব তার সৌন্দর্য। ক্যামেরা ব্যবহারের জন্য অনুমতি লাগে এখানে। জুতো জমা রেখে তবে ঘোরা যাবে পুরোটা। একটা গ্রন্থাগার আছে। এছাড়া, পর্যটকদের জন্য একটা মেডিটেশন সেন্টারও আছে এই রকে। এবার ফেরার পালা। আরও একবার সমুদ্রপথের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। বস্তুত, ট্রিপের এই পুরো অংশটাই এমন, যা স্মৃতিতে আজও অমলিন।

 

 

ছবি ঋণ : ইন্টারনেট

 


পাঠকদের মন্তব্য

Goutam Chakraborti লিখেছেন... ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৪
Nice detsils

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up