বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস
মৃণালিনী ঠাকুর
তোমরা অনেকেই নিশ্চয়ই চিড়িয়াখানায় বন্য পশুদের দেখেছ। আবার রিজার্ভ ফরেস্ট অর্থাৎ সংরক্ষিত বনাঞ্চল বা অভয়ারণ্যেও ঘোরাফেরা করতে দেখেছ ওদের। চিড়িয়াখানায় তো ওদের প্রায় বন্দিদশা ! সেই তুলনায় অভয়ারণ্যে ওরা স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করার সুযোগ পায়। তবে, এরও বাইরে, লোকালয় থেকে দূরে এক বিশাল সংখ্যক পশুপাখি আছে, যারা গভীর অরণ্যে বাস করে। অরণ্যের গাছপালাদের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে, মুক্ত পরিবেশে সবচেয়ে ভালো থাকে ওরা। বলা বাহুল্য, ওদের ভালো থাকার ওপর মানুষের অর্থাৎ আমাদেরও ভালো থাকা অনেকটাই নির্ভর করে। আসলে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী একে অপরের পরিপূরক, সে সভ্য সমাজেই হোক বা গভীর অরণ্যে।
কিন্তু ওদের ভালো থাকার ক্ষেত্রে কিছু লোভী মানুষ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারা হাতির দাঁত, বাঘের চামড়া, গন্ডারের খড়্গ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পশুর শরীরের নানা অংশ বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে, যদিও পুরো কাজটাই বেআইনি। বেআইনি হলেও শুধু চোরা শিকারীদের এইসব কার্যকলাপের জন্য বহু প্রজাতির প্রাণী পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এরই পাশাপাশি আছে যত্রতত্র গাছকাটা। এক্ষেত্রেও আইনের শাসন না মানার প্রবণতা ভীষণভাবে ক্ষতি করে চলেছে অরণ্যের। সব মিলিয়ে ভয়াবহভাবে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য।
এই বিষয়টিকে প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যেই বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর ৩রা মার্চ তারিখে দিনটি পালন করা হয়। ২০১৩ সালে গৃহীত এক প্রস্তাবের মাধ্যমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এই দিবস পালনের কথা ঘোষণা করে। এই উদযাপনের উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করা। সর্বস্তরে বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনুষ্ঠান, আলোচনা, সেমিনার আয়োজিত হয়।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য চালানো হয় প্রচার। স্কুল-কলেজ ও কমিউনিটি পর্যায়ে আলোচনা সভা ও কর্মশালার আয়োজন ক'রে, নতুন প্রজন্মকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা হয়। অবৈধ শিকার ও বন ধ্বংসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হয় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে। সবশেষে, তোমাদের জেনে রাখা দরকার–বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস শুধুমাত্র উদযাপনের জন্য নয়, এটি আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দেয়–মানুষ ও প্রকৃতি পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। তাই পৃথিবীর সমস্ত জীবের টিকে থাকার ক্ষেত্রে উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলতে উদ্যোগী হতে হবে সকলে মিলে।
ছবি ঋণ ইন্টারনেট
পাঠকদের মন্তব্য
250