ছোটোদের চাঁদের হাসি / জেনে নিতে মানা নেই / মার্চ ২০২৪

রবীন্দ্র-ভাবনায় বসন্ত উৎসব

 

 

শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কারণ শান্তিনিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা যে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঋতুভিত্তিক উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রকৃতি ও মানুষের মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছিলেন। আমাদের জীবন-যাপনে প্রকৃতি যত বেশি উপেক্ষিত হবে, ততবেশি নেতিবাচক হবে আমাদের জীবন। তাই রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রাত্যহিক জীবন ও উৎসবের সঙ্গে প্রকৃতিকে মিলিয়েছিলেন। আমাদের ঋতুরাজ বসন্তের শ্রেষ্ঠ উৎসব হোলি বা দোল যা রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় বসন্ত-উৎসব।

 

শীতকালে প্রকৃতি একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়, কিন্তু সব শেষেরই তো শুরু আছে। তাই  ঠিক তারপরেই বসন্তের ডালি নিয়ে প্রকৃতি সেজে ওঠে অপরূপ সাজে। রবীন্দ্রনাথ বসন্তের আবির্ভাবকে মনে করেন 'নবীন' বা নতুন প্রাণের সূচনা। ১৩১৩ সালের ৫ ই ফাল্গুন শ্রীপঞ্চমীর দিন রবীন্দ্রনাথের ছোটছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম বসন্ত উৎসব শুরু করেন শান্তিনিকেতনে। সেই সময় তিনি আশ্রমের কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে আদি কুটিরের হলঘরে এই উৎসব পালন করতেন। সেই ১৩১৩ বঙ্গাব্দ থেকে আজও শান্তিনিকেতনে বসন্ত-উৎসব পালিত হয়ে আসছে। তবে, পরবর্তীকালে দোলের দিন বসন্তোৎসব পালিত হয়।

 

 

বসন্ত-উৎসবকে অন্যরকম ভাবে সাজিয়েছিলেন শিল্পী নন্দলাল বসু, শান্তিদেব ঘোষ প্রমুখ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্তোৎসবকে দোল বা হোলির নিতান্ত আমোদ-প্রমোদ থেকে মুক্ত করে ঋতু উৎসবের পর্যায়-ভুক্ত করেন। ক্ষিতিমোহন সেন এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন “এই উৎসব সত্য ও সুন্দরের জয়ের প্রতীক।” শান্তিনিকেতনের শিক্ষার্থীরা বসন্তোৎসবের আগের দিন 'ও আমার চাঁদের আলো' গানটি গেয়ে পুরো আশ্রম প্রদক্ষিণ করে। পরদিন সকালে বাসন্তী রঙের শাড়ী, জামাকাপড় পরে মিছিল-নৃত্যের মাধ্যমে (খোল দ্বার খোল) উৎসব প্রাঙ্গণে আসে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য ! তালপাতার ঠোঙায় আবির এবং সেই আবিরের রঙে আম্রকুঞ্জ থেকে গৌরপ্রাঙ্গণ পুরো রাঙা হয়ে যায়। গৌরপ্রাঙ্গণের মঞ্চে অনুষ্ঠান শেষ হলে, ছাত্রছাত্রীরা আম্রকুঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় দলবদ্ধভাবে নাচ-গান করে।

 

 

শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসবে অযাচিত রঙের ব্যবহার, হৈ-হুল্লোড় দেখা যায় না। এখানে শুধু আবির ব্যবহৃত হয়। সেও সকালে অনুষ্ঠানের মাঝে একে অপরকে আবির দেওয়ার নিয়ম নেই। অনুষ্ঠানের শেষ গান 'রাঙিয়ে দিয়ে যাও গো এবার' শুরু হবার পরই একে অপরকে আবির দিয়ে সৌজন্য বিনিময় এবং শেষে শিক্ষকদের বাড়ি গিয়ে তাঁদের পায়ে আবির দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সন্ধ্যাবেলা গৌরপ্রাঙ্গণের ওই মঞ্চেই ছাত্রছাত্রীরা পরিবেশন করে রবীন্দ্রনাথ সৃষ্ট কোনও নৃত্যনাট্য। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসবকে সম্পূর্ণ অন্য এক রূপ দিয়েছিলেন, যা আজ ভারতবর্ষের যে কোনও জায়গার 'হোলি' উৎসব’ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

 


পাঠকদের মন্তব্য

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up