পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব মানুষেরই
সাগ্নিক দে (ছাত্র)
শুনতে পাচ্ছো প্রকৃতি বলছে,
মানুষ এবার সংযত হও,
সৃষ্টিও আমি, ধ্বংসেও আমি,
তোমরা আমার উর্দ্ধে নও।
প্রতি বছর ৫ই জুন আমরা মহা উৎসাহে বিশ্ব-পরিবেশ দিবস পালন করি৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে আলোচলা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়৷ আর তারপর ক’টা দিন গেলেই আমরা এই গুরু দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়ে রোজের কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে যাই। মনে রাখা দরকার, মানুষকে নিয়েই যখন পরিবেশ, তাই, পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বও মানুষের উপরই বর্তায়৷
আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশ পাই প্রকৃতি অর্থাৎ গাছপালা, নদনদী, ঝরনা, পশুপাখি , মাটি, আলো, বাতাস ইত্যাদি থেকেই৷ এগুলিকে যথাযথ রক্ষা না করে, আমাদের স্বার্থের জন্য ধ্বংস করার ফল আমরা প্রতিনিয়ত চোখের সামনেই দেখছি। শুনেছি পাহাড়ি এলাকা ধ্বংস ও নদীর স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করার ফলস্বরূপ সৃষ্ট বিপর্যয়ের কথা। উপলব্ধি করেছি বনজঙ্গল নির্বিচারে নষ্ট করার ফলে কীভাবে পাহাড়ে ধ্বস নামছে ! আমরা এটাও অনুভব করছি, স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ হারিয়ে ফেলে কতটা বিপর্যস্ত পশুপাখিরা। আমাদের ভুলে এভাবেই প্রকৃতির ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সামগ্রিক প্রাকৃতিক পরিবেশ৷
প্রসঙ্গত, ভারতের সংবিধানে নাগরিকের যে মৌলিক কর্তব্যের উল্লেখ আছে–তাতে রয়েছে বনভূমি, জলসম্পদ, বন্যপ্রাণী ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করার কথা৷ এই কর্তব্য পালনে যে খামতি আছে, তা আমরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় দেখতে পাই৷ এখানে উল্লেখ্য ২০০৬-০৭ সাল থেকে স্কুলে পরিবেশ-বিদ্যা পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হলেও আমাদের নতুন করে ভাববার সময় এসেছে, এই পরিবেশ দূষনের কারণ ও তার সমাধান অর্থাৎ প্রাকৃতিক সম্পদের যথোচিত ব্যবহার ও সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে৷
পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহারের ক্ষতিকারক দিকটির কথা অবশ্যই উল্লেখ্য৷ প্লাস্টিক জল নিরোধক, হালকা এবং আকারে পরিবর্তনযোগ্য৷ এটি আবার জৈব প্রক্রিয়ায় পচনশীল নয়৷ নানা ধরনের ব্যবহার্য্য প্লাস্টিক দ্রব্যের বেশির ভাগই ‘Single Use’৷ ভারতে ১২০ মাইক্রনের চেয়ে কম প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও প্যাকেজিংয়ের কাজে বিধি-নিষেধ নেই৷ পৃথিবীতে যত প্লাস্টিক-বর্জ্য জমা হয়, তার শতকরা ৫০ ভাগ হলো প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত মোড়ক৷ সেই মোড়ক বহু বছর ধরে মাটি, জল ও বাতাসে থেকে যাওয়ার ফলে বিষাক্ত হচ্ছে পৃথিবীর মাটি, নদী, সাগর। এমনকী বাতাসেও ভাসছে অসংখ্য মাইক্রোপ্লাস্টিক৷ পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসাব অনুযায়ী ভারতে প্রতি বছর ৩৪ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়৷
অধুনা পরিবেশের দুটি গভীর সঙ্কট হল লাগামছাড়া ভূ-উষ্ণায়ন ও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা৷ আমাদের ফেলে দেওয়া লক্ষ লক্ষ টন প্লাস্টিক-বর্জ্য নদী-নালা হয়ে সাগরে যাওয়ার ফলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের প্রভূত ক্ষতি হয়৷ আটকে দেয় নিকাশির মুখ৷ আশার কথা, ২০২৩-এ দেশে ‘মিশন লাইফ’ নামে এক প্রকল্প চালু হয়েছে৷ মূলতঃ ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশবান্ধব জীবনশৈলিতে দীক্ষিত করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য৷
সবশেষে, বিপন্ন বাস্তুতন্ত্রকে বক্ষা করার জন্য যেসব ক্ষেত্রে নজর দেওয়া বিশেষ জরুরি তা হলো– ‘Single Use Plastic’ পরিত্যাগ করে পাটের বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা। যতদূর সম্ভব প্লাস্টিক কম ব্যবহার করা জরুরি। এছাড়া অপেক্ষাকৃত পুরু প্লাস্টিক পরিস্কার করে পুনব্যবহার করা এবং প্লাস্টিক-বর্জ্যকে আবার রি-সাইকেলের মাধ্যমে ব্যবহার্য্য করে তোলা ইত্যাদি৷
ছবি সৌজন্যে ইন্টারনেট
পাঠকদের মন্তব্য
250