শ্রদ্ধায়-স্মরণে
জানুয়ারি মাসে জন্মেছিলেন বাংলা তথা ভারতের দুই কৃতী সন্তান–স্বামী বিবেকানন্দ এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। সন্ন্যাস নেওয়ার আগে স্বামী বিবেকানন্দের নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। কলকাতার এক ধনী বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন যুক্তিবাদী, মেধাবী, প্রখর ধীশক্তি ও অদম্য সাহসের অধিকারী। ছোটোবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার প্রতিও আকর্ষিত হন নরেন। তাঁর অধ্যাত্ম চেতনার কেন্দ্রে ছিল সমাজের অগণিত মানুষের মঙ্গল-সাধন। তারুণ্যে পৌঁছে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করার পরই নরেনের জীবন সম্পূর্ণ বদলে যায়। গুরু রামকৃষ্ণদেবের কাছে তিনি শেখেন, সকল জীবের মধ্যেই ঈশ্বর বাস করেন। তাই, মানুষের সেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা করা হয়।
এই উদ্দেশ্য নিয়েই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রতিষ্ঠা করেন স্বামী বিবেকানন্দ, যা আজও সারা বিশ্বব্যাপী সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত। ভারতীয় যুব সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর জাগরণ-বাণী ছিল ‘ওঠো, জাগো, লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না!’ স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনটি ভারতে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯০২ সালের ৪ই জুলাই পরলোকগমন করেন স্বামী বিবেকানন্দ।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কোদালিয়া গ্রামে। বাবা জানকীনাথ বসুর কর্মসূত্রে তখন ওড়িশার কটকে থাকত তাঁদের পরিবার। সেখানেই সুভাষচন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন। বাড়িতে ছোটোবেলায় মায়ের কাছে রামায়ণ-মহাভারতের গল্প শুনতেন তিনি। মায়ের কাছ থেকেই সুভাষ একটি স্নেহশীল স্বভাব লাভ করেছিলেন। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য শৈশব থেকেই প্রাণ কাঁদত তাঁর। এরই পাশাপাশি প্রতিবেশী ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা ও উদ্যানচর্চায় ছাত্র জীবন কেটেছিল সুভাষের।
১৯০২ সালে তিনি কটকের প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয় স্কুলে ভর্তি হন। পরে কটকে স্কুলের পড়া শেষ করে তিনি চলে আসেন কলকাতায়। এর পরের পড়াশোনা প্রেসিডেন্সি কলেজ ও স্কটিশ চার্চ কলেজে। ছাত্রজীবন থেকেই সুভাষচন্দ্র ছিলেন অত্যন্ত চৌখস ও মেধাবী। তখনই তাঁর নির্ভীক ও দৃঢ় চরিত্রের পরিচয় মেলে। দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করার ব্রত নিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন সুভাষ। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে এগারো বার কারারুদ্ধ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনালগ্নে সুভাষ লুকিয়ে ভারত ত্যাগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি ও জাপান ভ্রমণ করেন ভারতে ব্রিটিশদের আক্রমণ করার জন্য সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে।
জাপানিদের সহযোগিতায় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের পক্ষ থেকেই প্রথম সুভাষচন্দ্র বসুকে ‘নেতাজি‘ আখ্যা দেওয়া হয়। এরপর সারা দেশ তাঁকে পরম শ্রদ্ধায় ‘নেতাজি‘ রূপে বরণ করে নেয়। ঐতিহাসিকদের মতে, ব্রিটিশ সরকারের রক্তচক্ষু এড়িয়ে ১৯৪৫ সালের ১৮ই আগস্ট সুভাষচন্দ্র সোভিয়েত রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পথে যে জাপানি বিমানটিতে যাত্রা করছিলেন, অতিরিক্ত যাত্রীর ভা গোরে তাইওয়ানে আগুন লেগে যায় সেই বিমানে এবং তাতেই মৃত্যু হয় সুভাষের।
পাঠকদের মন্তব্য
250