ছোটোদের চাঁদের হাসি / গল্পগাথা / জুন ২০২৫

গাছের আলো

জানালার পাশে গ্রিলের ওপর সারি সারি কয়েকটা ফুলের টব রাখা আছে। তিয়ানের বাবা টবগুলোতে গাঁদা, দোপাটি ও চন্দ্রমল্লিকা গাছের চারা লাগিয়েছিলেন। সেসব এখন বেশ বড় হয়ে উঠেছে। তিয়ান একটা ছোটো ঝাঁঝরি দিয়ে গাছগুলোতে নিজে জল দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে এসেই জল দিয়ে স্নান করায় গাছগুলোকে। তারপর ডাইনিং টেবিলে গিয়ে খেতে বসে। সেখান থেকে জানালার দিকে তাকিয়ে তার প্রিয় গাছগুলোর দিকে নজর রাখে। এবং মাঝে মাঝে এটাও দেখতে পায় যে তিনটে চড়ুই ও দুটো টুনটুনি ফুলের টবগুলোর ওপর বসে মাটি থেকে খুঁটে খুঁটে খায় কিছু।

                    

সেদিন স্কুল থেকে ফিরে গাছে জল দিতে গিয়ে দেখতে পেল যে চন্দ্রমল্লিকা গাছের তিন-চারটে কুঁড়ি নেই, কেউ যেন খুঁটে খেয়ে নিয়েছে। তিয়ান রেগে যায়। চিৎকার করে ওঠে–”মা দেখে যাও, কুঁড়িগুলো গেল কোথায়?”

“আমি কী করে জানব?”–কিচেন থেকে উত্তর দিলেন তার মা।

তিয়ান গলার আওয়াজ বিন্দুমাত্র না কমিয়ে বলে, “নিশ্চয়ই এটা ওই চড়ুই ও টুনটুনির কাজ।”

একটু থেমে আবার বলে ওঠে, “আসুক এখানে আজ, আটকে রেখে দেবো।”

তিয়ানের মা এবার কিচেন থেকে বেরিয়ে তার দিকে এগিয়ে এসে বলেন, “এত রাগ করছিস কেন? ওদেরও তো খাবার খুঁজে নিতে হয়!”

“তাই বলে ফুলের কুঁড়ি খেয়ে নেবে? ফুটে উঠলে এই চন্দ্রমল্লিকা তো বহুদিন গাছ আলো করে থাকে মা।”

“তা ঠিক। তবে এই গাছগুলো না থাকলে তো তুইও পাখি দেখতে পাবি না।”

 

মা’র কথার কোনো উত্তর না দিয়ে তিয়ান জানালার পাল্লাটা ভালো করে খুলে দেয়। বাইরে এখনও বেশ রোদ্দুর। কিছুক্ষণ আগেই স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেছে সে। আজ শুক্রবার। কাল-পরশু ছুটি আছে। অনেকক্ষণ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকল। চড়ুই বা টুনটুনি কাউকেই দেখতে পেল না। মনটা খারাপ হল তার। তবে কি ওরা তিয়নের রাগ বুঝতে পেরে গেছে? সে রান্নাঘরে ঢোকে। এধার ওধার খুঁজে একটা ছোটো স্টিলের বাটি তুলে নেয়। তাতে জল ভর্তি করে। তারপর কয়েকটা কৌটো থেকে নানা রকমের ডাল মুঠোয় নিয়ে, জানালা খুলে গ্রিলের এক কোণে জলভর্তি বাটিটা রাখে ও ডাল ছড়িয়ে দেয়। তারপর দূরের গাছ ও অন্যান্য বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে তিয়ান–”তোমাদের জন্য জল ও খাবার রেখে গেলাম চড়ুই ও টুনটুনি। গাছেদের ছোঁবে না কিন্তু। গাছে গাছে আলো ফুটতে দিয়ো। ভালো থেকো তোমরা।”

 

জানালার পাল্লা টেনে বন্ধ করে দেয় তিয়ান। নিজের ঘরে ফিরে আসে। নিজের পড়ার চেয়ার-টেবিলে চুপচাপ বসে থাকে। মনে মনে ভাবে, ওভাবে চড়ুই ও টুনটুনির ওপর রেগে যাওয়া ঠিক হয়নি তার। সে ওদের ভীষণ ভালোবাসে। গাছেরাও তার ভীষণ প্রিয়।


পাঠকদের মন্তব্য

কণিকা দাস লিখেছেন... ০৮ই জুন, ২০২৫
খুব ভালো লাগলো গল্পটা।
তনুজা চক্রবর্তী লিখেছেন... ০৮ই জুন, ২০২৫
শিশুদের মনটা খুব সুন্দর করে গল্পের মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভালোলাগল।

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up