ছোটোদের চাঁদের হাসি / গল্প শুধু গল্প নয় / মার্চ ২০২৪

কলকাতার বাগানবাড়ি

 

১৬৯০ সালে এক বর্ষামুখর দিনে জব চার্ণক সুতানুটিতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক এজেন্ট হিসাবে পদার্পণ করলেও কলকাতায় ব্রিটিশদের শ্রীবৃদ্ধির শুরু পলাশীর যুদ্ধের পরে। ১৭৫৭ সালে সিরাজকে উৎখাত করে মীরজাফরকে নবাবের গদিতে বসিয়ে তাঁর তোষাখানা লুটেপুটে নিয়ে লালমুখো সাহেবরা ফিরে এলো কলকাতায়। ব্রিটিশ সাহেবদের শ্রীবৃদ্ধির পাশাপাশি একাংশ বাঙালিরও দিন ফিরতে লাগল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহেবরা বুঝেছিল স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজনের সঙ্গে তাদের ব্যবসার খাতিরে সদ্ভাব রাখা খুবই প্রয়োজন। সেই সময় বাঙালিদের সাথে বেশ কিছু অবাঙালি বেওসাদারও তাদের আখের গোছাচ্ছিল। বানাচ্ছিল প্রাসাদ,বাগানবাড়ি। উমিচাঁদ, যিনি সিরাজ এবং ব্রিটিশ সাহেব–দুপক্ষের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে নিজের ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত করেছিলেন, কলকাতায় তাঁর প্রাসাদ ও বাগানবাড়ি দেখে সাহেবদের চক্ষু ছানাবড়া। কী এলাহি ব্যাপার ! কলকাতায় তখন সাহেব ও পয়সাওয়ালা বাঙালিদের বাগানবাড়ি বানাবার নেশা।

 

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহেবরা বাগবাজারে বানালো পেরিনস গার্ডেন–সিরাজকে আটকানোর জন্য সেখানে কামানও বসানো হয়েছিল। তাছাড়া ছিল সারমনস গার্ডেন। রবার্ট ক্লাইভ তাঁর বাগানবাড়ি বানিয়েছিলেন দমদমে। সেখানে প্রায়ই কামান বন্দুকের প্র্যাকটিশ হতো। হতো দুমদাম শব্দ। তার থেকেই অঞ্চলটার নাম হয়ে গিয়েছিল দমদম। হেস্টিংস সাহেবের বাগানবাড়ি ছিল আলিপুরে, লর্ড অকল্যান্ডের বেলগাছিয়ায়। পরে বেলগাছিয়ার বাগানবাড়িটা কিনে নেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদু প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। অকল্যান্ডের বোন এমিলি ইডেন বাগান করেছিল একেবারে মধ্য কলকাতায়, যার নাম ইডেন গার্ডেন।

 

এবার বাঙালি বাবুদের বাগানবাড়ির কথায় আসা যাক। হলওয়েল সাহেবের স্নেহধন্য সাগরেদ জমিদার গোবিন্দরাম মিত্রের পাশাপাশি দু-দুটো বাগানবাড়ি ছিল কলকাতায়–নাম জোড়াবাগান। এখনও ওই নামেই একটি থানা ও নির্বাচনী এলাকা আছে। আরেক জমিদার নন্দরাম, তাঁর বাগানের নাম ছিল নন্দন বাগান। রাজাবাগানে ছিল রাজা রাজবল্লভের বাগানবাড়ি। মোহনবাগান, বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব, সেটি ছিল উত্তর কলকাতায়, রাজা গোপীমোহন দেবের বাগানবাড়ি। হাতিবাগান ছিল নবাব সিরাজউদ্দৌলার হাতিশালা, এ তথ্য অনেকেরই জানা।

 

গণ্যমান্য সাহেবসুবো ছাড়াও অনেক বাগান কলকাতায় ছিল, আজও আছে। যেমন বাবুবাগান, বিবিবাগান, চোরবাগান, কেরানিবাগান ইত্যাদি। তবে, তার মধ্যে একটি পুরনো বাগানের গল্প না বললেই নয়। তা হলো, রতন সরকার গার্ডেন লেনের একটি বাগান। সেই ১৬৯৭ সালের কথা। ক্যাপ্টেন স্ট্যাফোর্ড জাহাজ থেকে কলকাতার ঘাটে নামলেন। অজানা অচেনা জায়গায় এসে তিনি একজন দোভাষী বা দোভাষ চাইলেন। জাহাজঘাটায় ঘুরন্ত সাহেব ধরার দালালরা দোভাষের বদলে শুনল ধপাস। সাহেব কি ধপাস ধপাস ক’রে কাপড় কাচার লোক চায় নাকি? ওরা ভেবেচিন্তে রতুকে ধরে আনল সাহেবের কাছে। রতু খুব চালাক চতুর মানুষ–অল্পদিনেই সে আকার-ইঙ্গিতে বুঝে এবং সাহেবের কাছে একটু ইংরেজি চর্চা করে তুখোড় দোভাষী বনে গেল। তারপর সাহেব-সংসর্গের অনিবার্য ফল–প্রচুর ধনসম্পত্তির মালিক রতন সরকার বানিয়ে ফেলল নিজের নামেই একটা বাগান।

 


পাঠকদের মন্তব্য

পার্থপ্রতিম আচার্য লিখেছেন... ১২ই মার্চ, ২০২৪
অপূর্ব চাঁদের হাসি। গল্পটি অনবদ্য / পার্থপ্রতিম আচার্য

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up