বিল্টু ও অতিথি
ইমরান খান রাজ
(বাংলাদেশ )
বাবা-মায়ের খুব আদরের ছেলে রাফসান। সুন্দরবনের পাশেই তাদের বাড়ি। ভাই-বোন না থাকায় বাবা-মায়ের সব আদর, ভালবাসা আর খেলনাগুলো সবই তার একার। পড়ে ক্লাস থ্রি-তে। তবুও দুষ্টুপনায় ক্লাসের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। বাবা-মা আদর করে তাকে বিল্টু নামে ডাকে। একবার স্কুল থেকে ফেরার পথে ছোট একটি বিড়ালের বাচ্চা দেখতে পেয়ে সেটাকে বাসায় এনে, লালন-পালন করে সে। পশুপাখির প্রতি তার যেন আলাদা এক ভালোবাসা কাজ করে।
শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে, ঠান্ডা জলে হাত-মুখ ধুতে বিল্টু মোটেও পছন্দ করে না। তারপরও মা তাকে রোজ সকালে উঠিয়ে, জলখাবার খাইয়ে, ইউনিফর্ম পরিয়ে স্কুলে পাঠায়। মা আজও বিল্টুকে একই নিয়মে ঘুম থেকে উঠিয়ে স্কুলে পাঠালো। স্কুলে ঢুকেই বিল্টু দেখলো রতন স্যারের ক্লাস চলছে। বাংলা ক্লাস। সে চুপচাপ অনুমতি নিয়ে ক্লাসে ঢুকে বসে পড়ল তার বন্ধু রবিনের পাশে। স্যার আজকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পাখি নিয়ে আলোচনা করছেন। দেশ ও বিদেশের কয়েকটি পাখির সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। বিল্টু যেহেতু পশুপাখি প্রেমী, তাই খুব মনোযোগ দিয়ে আজকে স্যারের পড়ানো শুনল।
সব ক্লাস শেষে ছুটির ঘন্টা বেজে ওঠে। ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই আনন্দ-উল্লাসে স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়ল, বাসায় যাবার উদ্দেশ্যে। রবিন ও বিল্টুর বাসা পাশাপাশি। তাই তারা রোজ স্কুল শেষ করে একসাথে বাড়ি ফেরে। দুজনে কথা বলতে বলতে হাঁটছিল। হঠাৎ বিল্টুর চোখ পড়ল রাস্তার পাশের পুকুরপাড়ে। কৌতুহল নিয়ে পুকুরপাড়ের আমগাছের কাছে যেতেই দেখল একটি পাখি মুমূর্ষু অবস্থায় বসে আছে। উড়তে কিংবা হাঁটতে পারছে না। ছোট বাচ্চা। হয়তো তার বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলেছে। বিল্টু খুব আলতো করে ধরে যত্ন করে পাখিটিকে তাদের বাসায় নিয়ে গেলো।
বাসায় ফিরে ব্যাগ রেখেই সোজা চলে গেল বাবার কাছে। দেখালো পাখির বাচ্চাটাকে। বাবা খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করল পাখির বাচ্চাটিকে। মাথার ধূসর রং দেখেই বিল্টুর বাবা বলে উঠল, আরে এটা তো জলপিপি। এরা আমাদের অতিথি পাখি। প্রতিবছর শীতকালে অনেক দূর থেকে আমাদের দেশে আসে আশ্রয় নিতে। অতিথি পাখি জলপিপির কথা শুনে বিল্টুর আগ্রহ বেড়ে গেল। সে বাবার কাছে আরও জানতে চাইল। তার বাবা বলল, জলাভূমিতে বিচরণকালে অদ্ভুত সুন্দর ‘পি পি পি' সুরে ডাকে বলে এদের বাংলা নাম জলপিপি রাখা হয়েছে। এরা ‘দলপিপি’ নামেও পরিচিত। এদের ইংরেজি নাম ব্রোঞ্জ উইংড জাকানা। এদের বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখতে পাওয়া যায়।
বাবার কাছে জলপিপির বিষয়ে জানার পর, বিল্টু সিদ্ধান্ত নিলো যে, এই বাচ্চা জলপিপিটাকে সে লালন-পালন করে বড় করবে। তারপর পাখিটির মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেবে। বিল্টুর কথা শুনে তার বাবা খুব খুশি হলো এবং বাজার থেকে পাখিটি রাখার জন্য একটা সুন্দর খাঁচা নিয়ে আসলো। তারপর বিল্টুকে বলল, “এই পাখিটা তোমার অতিথি। তাই এটাকে খুব যত্ন করে রাখবে। কেউ যেন আমাদের দেশে আসা কোন অতিথি পাখির শিকার না করে, সেদিকে সর্বদা খেয়াল রাখবে।” পরদিন সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বিল্টু পুকুরের ছোট মাছ, জলজ উদ্ভিদের কচি পাতা এনে খেতে দিলো পাখিটিকে। পাখিটি খাবার দেখে খুব মজা করে খেয়ে নিলো সবটুকু। পরে সে স্কুলে গিয়ে সব বন্ধুদের কাছে জলপিপির কথা বলল। স্কুল ছুটির পর অতিথি পাখিটিকে দেখানোর জন্য বিল্টু সব বন্ধুদের নিয়ে এলো তাদের বাড়িতে।
পাঠকদের মন্তব্য
250