ছোটোদের চাঁদের হাসি / দেশ-বিদেশের গপ্পো / জানুয়ারি ২০২৪

বুদ্ধির কেরামতি

(কর্নাটকের লোককথা)

 

প্রাচীনকালের কথা। তখন সব গ্রামে একজন মোড়ল বা বিচারক থাকতেন। তিনি ঝগড়া মেটাতেন, অন্যায় অবিচারের বিচার করতেন।যোগিহান্নি গ্রামে হমবলয়া তেমন এক অত্যন্ত সৎ, নিরপেক্ষ ও বুদ্ধিমান মোড়ল বা বিচারক ছিলেন। তাঁর সততা ও নিখুঁত বিচারের ক্ষমতা রাজার কানে গিয়েছিল। তিনি ঠিক করলেন তাঁর বিচারের পরীক্ষা নেবেন। এক বণিকের ছদ্মবেশে রাজা রওনা দিলেন যোগিহান্নি গ্রামে, ঘোড়ায় চড়ে।

 

চলার পথে এক ভিখারি বণিকের ছদ্মবেশে থাকা রাজার হাতে পায়ে ধরে বলল “আমি যোগিহান্নি গ্রামে যাবো। দয়া করে আমাকে সেখানে নিয়ে চলুন।”

বণিক-সাজা রাজার দয়া হল। ভিখারিকে তুলে নিলেন ঘোড়ার পিঠে। বণিক সেই গ্রামে পৌঁছলেন। কিন্তু ভিখারি ঘোড়ার পিঠ থেকে নামতে চাইল না, বণিককে বলল নেমে যেতে। বণিক তো অবাক ! কে ঘোড়ার আসল মালিক এই নিয়ে ঝগড়া, হৈ চৈ। ভিড় জমে গেছে অনেক লোকের। এক যুবক বলল ‘দুজনেই বলছেন ঘোড়াটা আমার’। এই জটিল বিবাদ মীমাংসা করতে পারেন একজন। এই গ্রামের মোড়ল বা বিচারক। তাঁর কাছে চলুন।

ভিখারি রাজি। আর বণিক তো এটাই চেয়েছিলেন। এবার দেখবেন বিচারকের ক্ষমতা।

 

হমবলয়াকে ভিখারি বলল,”আমার ঘোড়ায় এই ক্লান্ত বণিককে চাপিয়ে নিয়ে এলাম। এখন বণিক বলছে এটা তার ঘোড়া।” বণিক বললেন, “আমি পথের পাশে একে দেখলাম। খুব হাতে পায়ে ধরে এই গ্রামে নিয়ে যেতে অনুরোধ করল বলে তাকে আমার ঘোড়ার পিঠে চাপালাম। এ ঘোড়া আমার।”

বিচারক সব শুনে আরও উনিশটা ঘোড়া আনালেন। বণিক ও ভিখারিকে দূরে সরিয়ে দিলেন তার আগে। এবার ওই ঘোড়াটাকে উনিশটা ঘোড়ার মাঝখানে রাখলেন।

বণিক ও ভিখারিকে ঘোড়াগুলোর কাছে আনা হলো। বিচারক বললেন, “এই কুড়িটা ঘোড়ার মধ্যে নিজের ঘোড়া বেছে নাও।” অদ্ভুত কাণ্ড! দুজনেই ওই ঘোড়াটাকে তাদের বলে দাবি করল। বিচারক অনেক চিন্তা-ভাবনা করে রায় দিলেন, এই ঘোড়া বণিকের। তাঁর রায় অনুযায়ী ভিখারিকে মিথ্যা কথা বলার জন্যে কয়েক ঘা চাবুক মারা হলো।

 

বণিকের ছদ্মবেশে রাজা মুগ্ধ। তিনি তাঁর নিজের আসল পরিচয় দিলেন। আচমকা স্বয়ং রাজাকে দেখে বিচারক ও গ্রামের সবাই অত্যন্ত খুশি ও রাজাকে যথেষ্ট সম্মান দেখালেন।

রাজা বিচারককে প্রশ্ন করলেন “কীভাবে বুঝলেন এই ঘোড়াটা আমার?”

বিচারক বললেন, “আপনি যখন এই ঘোড়ার কাছে গেলেন, তখন আপনার ঘোড়া আপনাকে দেখে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল। তার চোখদুটো আনন্দে ঝলমল করছিল। আর ভিখারিটা যখন ঘোড়ার কাছে গেল, তখন ঘোড়াটা ওকে জোড়া লাথি মারার চেষ্টা করছিল। ঘোড়াটা নিজেই বুঝিয়ে দিলো তার আসল মালিক কে!”

 

রাজামশাই বিচারক হুমবলয়ার নিখুঁত বিচার করার ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ, অভিভূত। তিনি তাঁকে যথেষ্ট পুরস্কৃত করলেন।


পাঠকদের মন্তব্য

নীতীশ বসু লিখেছেন... ২৮শে জানুয়ারি, ২০২৪
বুদ্ধির কেরামতি গল্পটা পড়েছি সম্রাট আকবরের রাজসভায় বীরবলের বিচার গল্পে কিন্তু এখানে কর্নাটকের লোককথা , তাহলে কোনটা ঠিক যদিও লোককথা তবু আমার জানার ইচ্ছে করছে ।
উত্তরে Admin লিখেছেন... ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
লোককথা দেশ-কাল ভেদে, মানুষের মুখে মুখে ফেরে। সেখান থেকেই পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশ পায়। এক্ষেত্রে কোনোটাই ভুল নয়। সবগুলোই ছোটোদের জন্য আনন্দের বার্তা বয়ে আনে।

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up