ছোটোদের চাঁদের হাসি / দেশ-বিদেশের গপ্পো / এপ্রিল ২০২৪

শ্রমের মূল্য

(মূল কাহিনি কন্নড় ভাষায়, লিখেছেন মধুকেশ্বর বেলগলী)

 

এক শহরে বসবাস করতেন এক বণিক। তাঁর একমাত্র ছেলেটি একেবারে নিষ্কর্মা। স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া বা সংসারের কাজকর্মে সাহায্য করা–কোনোটাই সে করে না। রোজই তার বাবা তাকে কিছু একটা কাজ করার জন্য বলতেন। কিন্তু বাবার কথায় সে পাত্তা দিলে তো! “আজ যে করেই হোক তুমি কিছু উপার্জন করে আনো, নাহলে বাড়িতে খাবার পাবে না”–একদিন সেই বণিক ছেলেকে বেশ কড়াভাবে কথাগুলো বলে দোকানে চলে গেলেন।

 

সারাদিন এদিক-ওদিক ঘুরে নিরাশ হয়ে ছেলে বাড়ি ফিরে এলে মায়ের মায়া হলো। খাইয়ে-দাইয়ে তাকে দু'টাকা দিয়ে, তার কানে কানে কিছু বলে দিলেন তিনি। রাতে বাড়ি ফিরে ছেলের কাছে রোজগারের কথা জানতে চাইলে, সে ওই দু'টাকা বাবাকে দিল। “টাকাটা উঠোনের কুঁয়োয় ফেলে এসো”–বাবা কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে ছেলে টাকা ফেলে দিলো। বাবাও আসল ব্যাপার বুঝতে পারলেন। এরপর সকালে তাকে সতর্ক করে বললেন,”আয় করে আনো, তবেই খেতে পাবে।”

 

পরদিন বণিক কী একটা অজুহাতে স্ত্রীকে বাপের বাড়ি পাঠালেন। সেদিনও ছেলেটি হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরল। এদিকে বাড়িতে তো মা নেই। তবে, তার বোন শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে। ভাইকে দেখে বোনের খুব খারাপ লাগায়, সেও এক টাকা দেয়। রাতে বাবা বাড়ি ফিরলে ছেলে তার হাতে সেই টাকা দিলে, ঠিক আগের মতোই বাবা বলেন, “টাকাটা উঠোনের কুঁয়োয় ফেলে এসো।” ছেলেও তেমনটাই করলে, বণিক এবারও সত্যিটা বুঝে ফেললেন।

 

পরদিনই মেয়েকে স্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে তিনি ছেলেকে হুঁশিয়ার করেন! “কিছু রোজগার করে আনলে তবেই খাবার পাবে”–বলে বণিক দোকানে চলে গেলেন। ছেলেটিকে পয়সা দেওয়ার মতো এবার বাড়িতে আর কেউ নেই। সে বেশ সমস্যায় পড়ে গেল। কোনো সমাধান ভেবে না পেয়ে, শহরের এক দোকানের রোয়াকে ছেলেটি প্রচন্ড মনখারাপ করে বসে থাকে। সকাল থেকে কিচ্ছু খাওয়া হয়নি। বাড়ি গিয়ে কী খাবে, তা-ই ভাবে। এমন সময় কেউ একজন, তাকে কুলি মনে করে বলে, “ও ভাই, এই পেটিটা আমার বাড়িতে পৌঁছে দিলে আট আনা দেব।”

 

সেই অপরিচিত মানুষটির দিকে একবার তাকিয়েই আশায় কুঁড়ে ছেলেটির চোখ ঝলমলিয়ে ওঠে। এক নজরেই বোঝা যায়, বাক্সটা বেশ ভারি। তবু বাধ্য হয়ে ওটাই বইতে হয় তাকে। প্রচণ্ড রোদ, বাড়ির দূরত্ব, ভারি পেটি–সব সামলে, ঘামে চুপচুপে হয়ে, অচেনা লোকটির বাড়িতে বাক্সটা পৌঁছে দিয়ে, সে আট আনা পায়। ততক্ষণে সে ভীষণ ক্লান্ত। সন্ধেয় বাবা-ছেলে দুজনেই বাড়ি ফিরে আসে।

 

'আজ কত আয় করলে?' বাবার জিজ্ঞাসায় ছেলেটি তাঁর সামনে ওই আট আনা রেখে দেয়। এবার তিনি বলেন, “এটাও কুঁয়োয় ফেলে এসো!”

“কেন?” ছেলে রেগে যায়, “জানো, এটুকু রোজগার করতেই আমি ঘেমে-নেয়ে গেছি। এখনও আমার পিঠে ব্যথা। পয়সাটা ফেলব কেন?” বাবা যথার্থ ঘটনা বুঝতে পারলেন।

 

“এবার তুমি শ্রমের মূল্য বুঝলে তো? গতকাল এবং পরশু তিন টাকা কুঁয়োয় ফেলে দেওয়ার সময় তোমার একটুও কষ্ট হয়নি। আর এখন? আট আনা ফেলতে মন চাইছে না। কেন জানো? কেন না এ হলো পরিশ্রমের রোজগার। অন্যগুলো বিনা খাটুনির উপার্জন। মেহনতের রোজগারের নিজস্ব মূল্য আছে। পরিশ্রম করে আয় করা টাকাপয়সা নষ্ট করতে মন চায় না। এখন তুমি নিজের দায়িত্ব বুঝতে পেরেছ। টাকার মূল্য জেনেছ। কাল থেকে আমাকে দোকানের কাজে সাহায্য কর।” কথা সেরে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাবা খেতে গেলেন।

 

 


পাঠকদের মন্তব্য

তনুজা চক্রবর্তী লিখেছেন... ১৭ই এপ্রিল, ২০২৪
গল্পটি শিক্ষামূলক, সুন্দর লেখা। চমৎকার অনুবাদ করেছেন।

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up