ছোটোদের চাঁদের হাসি / ছড়া - কবিতা / অক্টোবর ২০২৪

ছড়া-কবিতা

পুজো দেখা

কাজী মুরশিদুল আরেফিন

 

ষষ্ঠীর দিন থেকে

পুজো আর প্যান্ডেল,

হেঁটে হেঁটে ছিঁড়ে গেছে

একজোড়া স্যান্ডেল।

 

অবশেষে বাসে ঝুলি

ধরে রাখি হ্যান্ডেল,

 চুঁচুড়ায় যেতে গিয়ে

নেমে পড়ি ব্যান্ডেল।

 

হেঁটে হেঁটে পায়ে ব্যথা

টনটনে ফোস্কার,

একশোটা পুজো দেখা

সেটা আর দোষ কার?

 

নবমীতে টাকি যাই

কেউ যায় বস্টন,

আরও দূরে চাঁদে পুজো

তেল পোড়ে দশ টন।

 

চাঁদে গিয়ে কাজ নেই

দশমীতে দুমকায়,

পুজো-শেষে বাড়ি ফিরে

দুর্গারও ঘুম পায় !!

 

 

যেতে যেতে

বিমলেন্দ্র  চক্রবর্তী

 

পুজোর ছুটি, কেমন কাটে?

আগরতলা কুমারঘাটে।

সেখানে কি মামার বাড়ি?

নারে ওটা মাসির  বাড়ি।

ঝিকির ঝিকির তাড়াতাড়ি

আটটা দশে ছাড়বে গাড়ি।

তিনটি গুহা পথেই পাবি

দেখলে ভীষণ মজা পাবি।

চায়ের বাগান রাবার বন

ভ্রমণ মানে উদাস মন।

মাঠ নদী গাছ দৌড়ে চলে

বল তো দেখি মন কি বলে?

মনের কথা সব কী জানি

শিউলি শরৎ ঋতুর রানি।

সঙ্গে যাবে কে তোর শুনি?

একটা টুনা একটা টুনি

ওরা আবার হচ্ছে কি তোর?

দুটি পাখি আধখানা ভোর।

বেশতো ভালো টিকিট আছে?

ওরা তো সব গাছে গাছে।

রেল চলছে একটু দুলে

কেউবা বসে কেউবা ঝুলে।

 সাজছে পাহাড় ফুলে ফুলে

আমায় কিন্তু যাসনে ভুলে।

 

 

শরৎ-মেঘের কথা

সুবীর ঘোষ

 

নীল আকাশে চলছে ভেসে

সাদা মেঘের ভেলা,

সোনারোদে ঝিলমিলমিল

মেঘরৌদ্রের খেলা।

পথিক মেঘের দল জোটে

আর হারিয়ে কখন যায়,

যাবার আগে একবারও কী

আমার দিকে চায়?

এই তো আমি মেঘ দেখি

আর ভাবি অবাক চোখে–

মেঘের বাসা আছে কোথায়

কোন্ সে  নভোলোকে!

মেঘের ডানায় চড়ে আমি

সেথায় যদি যাই,

মেঘ-রাজ্যের গোপন কথা

জানতে আমি পাই !!

 

 

পালটে গেছে ছবি

গৌতম হাজরা

 

নদীর পাড়ে বসে আছি

ভাসছে নাওয়ের পাল

আকাশ দেখি মেঘ সরিয়ে

হাসছে এক গাল।

শরত এলো শরত এলো

পালটে গেছে ছবি

একটুখানি ভাবুক হয়ে

লিখলো ছড়া কবি।

ওই যে দূরে যাচ্ছে শোনা

ঢ্যাম কুড় কুড় বাজনা

বৃষ্টি এবার নিয়েছে ছুটি

মেঘ বলছে আর না।

হয়ত কোথাও হেলেদুলে

যাচ্ছে দুরের দেশে

সেই যেখানে পাহাড়চূড়ায়

মেঘেরা সব মেশে।

শাপলা শালুক যাচ্ছে দেখা

হাওড় বাওড় বিলে

যাচ্ছে উড়ে বকের সারি

একসাথে সব মিলে।

পুজোর গন্ধ চর্তুদিকে

শিউলি টগর ফুলে

নরম রোদ পাঠায় খবর

কাশের এলোচুলে।

  

 

শরৎ এসেছে তাই

দীপিকা রায়

 

শরৎ এসেছে তাই কি আকাশে

নীল সাদা মেঘ ভাসে

মাঠ ভরা ছোট শিশিরের কণা

স্নিগ্ধ সবুজ ঘাসে !!

হঠাৎ কেন যে পুলকিত মন

আনন্দে নেচে ওঠে

দীঘি ভরা জলে দুলে দুলে কত

শাপলা পদ্ম ফোটে।

দূরে দূরে গ্রাম, ভেসে আসে সুর

বাউলের একতারা

নিজের খেয়ালে ছন্দ ছড়ায়

কোনো এক পথহারা।

সবুজ মাঠের ধার দিয়ে গেছে

ধুলোমাখা পথ বেঁকে

না জানা কত যে ফুলের সুবাস

সুগন্ধে ভরে রাখে।

ছোট ছোট গ্রাম, মস্ত আকাশ

শিউলির সুঘ্রাণ

গোধূলির ছায়া শান্ত বাতাস

শিশুদের কলতান।

মাঠের প্রান্তে ছোট এক নদী

বয়ে চলে কুলকুল

বুকের মধ্যে ঢ্যাং কুড় কুড়

রাশি রাশি কাশফুল।

শরৎ এসেছে তাই কী আকাশে

চাঁদ তারা চমকায়

এবার পুজোতে

তোমরাও এসো

আমাদের ঠিকানায়!

  

 

সাদামাটা ছড়া

অর্ণব ভট্টাচার্য

 

চক সাদা, চাল সাদা, সাদা হয় দুগ্ধ,

আকাশের সাদা চাঁদ দেখে হই মুগ্ধ।

পিঠে সাদা, ধোসা সাদা, সাদা রঙ পায়েসে,

মেয়োনিজ সাদা তাও, বসে খাই আয়েশে।

চুন সাদা, আরও সাদা দিদিমার চুলটা,

খাতা সাদা, দেখো সাদা ওই জুঁই ফুলটা।

সাদা হয় মোমবাতি, সাদা হয় লস্যি,

দই সাদা, চুপিচুপি খেয়ে নেয় দস্যি।

এত সাদা, কাকে ছেড়ে বলো বলি কোনটা?

শুনে যাও, শুধু ভাই, সাদা রেখো মনটা।

 

 

দুর্গা ঠাকুর এলো বলে

সুব্রত চৌধুরী

 

পুজোর খুশির ছোঁয়া লাগে বনের গাছে গাছে

কুহু কুহু সুরে ময়ূর পেখম মেলে নাচে।

সিংহী বেড়ায় গলার মালায় হলুদ জবাফুল

কাকাতুয়ার ঝুঁটির মাথায় ঝুমকোলতা ফুল।

 

বানর বাজায় গাছের ডালে কলাপাতার বাঁশি

গোঁফ নাচিয়ে ছুটে বেড়ায় বাঘের প্রিয় মাসি।

ঘোড়া ছোটে টগবগিয়ে পিঠে চড়ে টিয়ে

শিয়াল ডাকে হুক্কা হুয়া টোপর মাথায় দিয়ে।

 

শিউলি ফুলের মালা গলায় ছাগী বেড়ায় ঘুরে

হনুমানটা নেচে বেড়ায় শালিক পাখির সুরে।

হাতি আসে হেলে দুলে শুঁড় উঁচিয়ে নাচে

নদীর জলে ঘাঁইটি মারে হরেক রকম মাছে।

 

হরিন লাফায় তিড়িং বিড়িং জেব্রা সাজে সং

কাশের রেণু মেখে ওরাং দেখায় কতো ঢং।

ষণ্ডা বেশে গন্ডার এসে ডিগবাজি খায় ওই

তাই না দেখে হেসেই মরে হরিন ছানার সই।

 

হুল্লোড় শুনে ছুটে আসে ডোরাকাটা বাঘ

আমায় ফেলে করছো মজা? দেখায় ভীষন রাগ।

শান্ত গলায় বলে সিংহ, রাগ করো না ভাই

দুর্গা ঠাকুর এলো বলে লুটছি মজা তাই।

 

 

ডানার খাতা

পিয়ালী ভট্টাচার্য 

 

যা খুশি তাই আঁকবে বলে

ডানার হাতে খাতা,

আঁকতে  আঁকতে হারিয়ে গেল

জমানো সব ব্যথা।

 

বুল্টি, বান্টি, বুম্বা,লহর 

ব্যস্ত যখন পড়ায়,

খেলার মাঠে একা ডানা

ভিজছে বৃষ্টিধারায়।

 

টাপুর টুপুর বৃষ্টিভেজা 

মেঘের কোলে হাসি,

রামধনু রং লাগিয়ে বলে

তোমায় ভালোবাসি!

 

ছলাৎ ছলাৎ ছম ছম ছম 

ডুব ডুব ডুব পা,

নরম মাটি সবুজ ঘাসে

চোখ বুলিয়ে যা।

 

ডাকছে ফিঙে, ডাকছে টিয়া

নিমের মধু খেয়ে, 

বৃষ্টিধোওয়া বিকেল রইল

খাতার দিকে চেয়ে।

 

 


পাঠকদের মন্তব্য

অমিত কুমার রায় লিখেছেন... ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪
ছড়া যতো হলো পড়া / দারুণ গড়া শিক্ষা মজা টাটকা ভাজা / মনে ভরা ❤
তুহিন কুমার চন্দ লিখেছেন... ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪
ছোটদের চাঁদেরহাসি একটি অত্যন্ত সুন্দর কাগজ যা শিশু কিশোর মনে আনন্দ জোগায়।
Tanuja Chakraborty লিখেছেন... ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪
প্রতিবারের মতো এবারও মিষ্টি আর সুন্দর সুন্দর ছড়া পড়ে মুগ্ধ হলাম। এভাবেই এগিয়ে যাক চাঁদেরহাসির ডিজিটাল সংখ্যা।
অর্ঘ্য দে লিখেছেন... ১০ই নভেম্বর, ২০২৪
খুব ভালো ছড়া পড়লাম। মন ভরে গেল।
স্বপনকুমার রায় লিখেছেন... ১২ই নভেম্বর, ২০২৪
ছোটোদের চাঁদের হাসির প্রিণ্টেড এবং অনলাইন সব সংকলন পড়ি। খুব ভালো লাগে। প্রকৃত ছোটোদের মনরাজ্যের কাছে পৌঁছানোর এক অনন্য প্রয়াস। অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় সম্পাদিকা দিদিকে।

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up