ছড়া-কবিতা
কবি প্রণাম
কাজী মুরশিদুল আরেফিন
বোশেখ মাসের পঁচিশ এলেই
মনটা সহজ পাঠে,
কবির লেখায় ছবির পাতায়
আনন্দে দিন কাটে।
মঞ্চে সাজাই কবির ছবি
এই যে গীতাঞ্জলি,
কাব্য ছড়া নাটক গানে
নৃত্যে কথাকলি।
কাবুলিওয়ালার ডাক পড়েছে
শুনছে আজও মিনি,
অমল এবং দইওয়ালাকে
ছোট্ট থেকেই চিনি।
বীর পুরুষের হা রে রে রে
সাহস জাগায় মনে,
কবি প্রণাম জোড়াসাঁকোয়
শান্তিনিকেতনে।
তাসের দেশে সবাই রাজা
অন্য তাদের ভাষা,
কেউ না এলে রবীন্দ্রনাথ
একলা জাগান আশা।
ওই যে আসেন মহামানব
বাউল জগৎ সেরা,
দুঃখ-সুখের প্রতিক্ষণে
কবির কাছেই ফেরা।
কবিগুরু
শ্যামাচরণ কর্মকার
ছোটো-বড়ো সবার তুমি জানি কবিগুরু
ছোট্টো থেকেই সবার প্রিয় লেখায় এবং গানে
তোমার সৃষ্টি আঁকড়ে বুকে পথচলা তাই শুরু
ছড়িয়ে আছো সবখানেতে জড়িয়ে আছো প্রাণে।
কী শিখিনি তোমার কাছে? কি লেখোনি তুমি?
যেটায় যখন হাত দিয়েছ সব হয়েছে সোনা
তোমার মেধা-জ্ঞান-গরিমায় ধন্য ভারতভূমি
তোমায় নিয়ে সবদিকে তাই আজও আলোচনা।
গান-কবিতা, গল্প-ছড়া, নাটক-নভেল, আঁকা
সব খানেতেই উজ্জলতায় তোমার উপস্থিতি
সবার মনের রাজা তুমি আসনটি তাই পাকা
মুখটা কেবল মনে পড়ায় তোমার জন্মতিথি।
তোমায় খুঁজি বন্ধ দ্বারে, অথৈ অন্ধকারে
খুঁজি তোমায় চলার পথে হলেই দিশেহারা
ন্যায়ের পথের যাত্রী যারা পুজোর উপচারে
খুঁজে বেড়ায় তারাও জানে তুমিই ধ্রুবতারা।
অসহায়ের সহায় তুমি, দীন- দুঃখিনীর আশা
বঞ্চনাতে কান্না পেলে রাখো মাথায় হাত
বাঁচতে শেখার মন্ত্রটা দাও, প্রতিবাদের ভাষা
তোমায় ছাড়া চলতে পারি হে রবীন্দ্রনাথ?
রবিকিরণ রবীন্দ্রনাথ
দীপঙ্কর গোস্বামী
একলা পথে চলতে গেলে যাঁর সাথে পথ চলি
একলা বসে ভাবতে গেলে যাঁর কথাতে ভাবি
আয়রে খোকা, আয়রে খুকি, তাঁর কথাটি বলি
জীবনভর পথটি চলার হদিশ তোরা পাবি।
ভোরের হাওয়া মারলে টোকা ঘুমের চোখে চোখে
দেখবি জেগে দাঁড়িয়ে তিনি পুব আকাশের বুকে,
ফুল বিছানো বকুলতলায় যেতে কে রে রোখে ?
দেখে তাঁকে যাস যদি সব ফুল কুড়াতে ঝুঁকে !
একলা পথের একলা পথিক ছিলেন একলা রাজা,
তোদের পেয়ে উঠবেন গেয়ে–'আমরা সবাই রাজা’,
তোরাও আলোর স্পর্শে স্পর্শে মেলাবি গলা ত্বরা–
'আলো আমার আলো ওগো আলোয় ভুবন ভরা...!'
মুগ্ধ আমি প্রশ্ন তুলে বলব তখন, শোন–
‘জানিস তোরা আলোয় ভরা মানুষটি এ কোন?’
বলবি তোরা লাফিয়ে উঠে–’জানি, জানি, জানি,
আমরা তাকে বিশ্বকবি বলে সবাই মানি’।
শুনে আমি বোকার মতো থাকব করে হাঁ–
রবিকিরণ রবীন্দ্রনাথ, একটুও ভুল না!
ওই পাখিটা
তনুজা চক্রবর্তী
ডাকে বড় মিঠে স্বরে ওই কালো পাখিটা
কাঁদে বুঝি দিন রাত লাল কেন আঁখিটা?
শিমুলের লাল আর পলাশের আগুনে
ঢেকে নিতে চোখ তার কুহু ডাকে ফাগুনে।
ভোর থেকে কুহু রবে ঝরে মধু আঝোরে
থাকে সদা আবডালে পড়ে না সে নজরে।
পাতা ঢাকা ডালে বসে কেন থাকে লুকিয়ে?
ডেকে ডেকে গলা তার যায় না কি শুকিয়ে?
রোজ ভাবি ডেকে বলি উড়ে কাছে আয়না
মানুষের কাছাকাছি আসতে সে চায়না!
ভাবে পায়ে বেড়ি দিয়ে রেখে দেবে খাঁচাতে
আসবেনা কেউ তাকে খাঁচা খুলে বাঁচাতে।
স্বাধীনতা কে না চায় ডানা মেলে উড়তে,
বসন্তে আসা তার জারি থাক ঘুরতে।
শৈশব আমার
শক্তিপদ পন্ডিত
শৈশব আমার বর্ণমালায়
শৈশব আমার কাঁদায় হাসায়,
শৈশব আমার স্লেট-পেন্সিলে
শৈশব আমার বাংলা ভাষায়।
শৈশব আমার ছিটে বেড়ায়
মাটির দেয়াল খড়ের বাড়ি,
শৈশব আমার পান্তা-মুড়ির
জোড়া উনুন মাটির হাঁড়ি।
শৈশব আমার পুকুর বিলে
সাঁতার কাটা শানের ঘাটে,
দোদুল দোলায় বটের ঝুরি
ঠাকুর তলায়, খেলার মাঠে।
শৈশব আমার লাট্টু-লেত্তি
বাটুল, লাটাই, কাঁচের গুলি,
শৈশব আমার বেলুন, বাঁশি
ভূতের গল্প, ঠাকুমার ঝুলি।
শৈশব আমার ফড়িং, পাখি
শৈশব আমার জোছনা ভাসি,
শৈশব আমার মায়ের আঁচল
মায়ের আদর, মায়ের হাসি।
তোমার কাছে আমরা যাব
চামেলি দাশগুপ্ত
তোমার কাছে আমরা যাব
বকুল ফুলের বন
ওই বনেতেই লুকিয়ে আছে
আমার ব্যাকুল মন।
তোমার কাছে আমরা যাব
কদম ফুলের গাছ
পাতার ফাঁকে ফুল দেখলেই
শুরু আমার নাচ।
তোমার কাছে আমরা যাব
শালুক দিঘির জল
দিঘির পাড়ে বন্ধুমিলে
একসাথে কলকল।
তোমার কাছে আমরা যাব
এক্কা দোক্কা খেলা
কী সুন্দর যায় কেটে যায়
খুশির ছেলেবেলা।
তোমার কাছে আমরা যাব
রঙিন প্রজাপতি
ছুটতে ছুটতে হাঁপিয়ে গেলেও
নেই তো কোন ক্ষতি।
তোমার কাছে আমরা যাব
উড়ন্ত নীলপাখি
ফেলে আসা ছেলেবেলা
ওইখানেতেই রাখি।
পাঠকদের মন্তব্য
250