ছড়া-কবিতা
বিচ্ছু ছড়া কিচ্ছু
অশোককুমার মিত্র
বাঘ বললে, বাঘিনী,
স্বপ্ন দেখা শেষ হয়েছে–
এখনো তো জাগিনি,
ধর না রে তুই, আদুর গলায়
ঘুম ভাঙানি রাগিনী।
বাঘিনী বললে, বাঘ,
ভ্যানতারা রাখ, তোর কথাতে
চড়ছে আমার রাগ,
খেতে দিতে না পারিস তো
এ বন ছেড়ে ভাগ।
আমার নদীগুলি
অচিন্ত্য সুরাল
ও আমার চুর্ণী নদী,
ও আমার জলঙ্গী রে
কাছে আয়, আয় এপাড়ায়
বয়ে যা আমায় ঘিরে।
কেন যে দূর দিয়ে যাস–
ওখানে যারাই থাকে
তারা যে বড্ড অবুঝ
পড়ে যাস দুর্বিপাকে।
তারা চায় নগদ কড়ি
কেবলই লোভ-লালসা
চেয়ে দেখ ইছামতীর
হয়েছে কী দুর্দশা।
বলি তাই বদলিয়ে পথ
চলে আয় সকল নিয়ে
আমার এই উঠোন ঘেঁষে
ছুটে চল কলকলিয়ে।
যতনে রাখব তোদের
সবুজে দু'পাড় ভরে
সারাদিন থাকবে ভেসে
বেহুলা ভেলায় চড়ে।
হাজারো লখিন্দরের
দেহে প্রাণ আসবে ফিরে
ও আমার কংসাবতী
ও আমার ভৈরবী রে।
রেলগাড়ি সংবাদ
আশিসকুমার মুখোপাধ্যায়
আজকে বরং দিই তোমাদের
রেলগাড়ি সংবাদ
যে যাই বলুক রেলগাড়িতেই
আছে প্রাণের স্বাদ।
কু-ঝিক-ঝিক চলছে গাড়ি
দিচ্ছে মুছে দূর
হাতের মুঠোয় সুরাট মিরাট
বম্বে বিলাসপুর।
মস্ত অজগরের শরীর
ছুটছে নিরন্তর
রেলের এক-এক কামরা যেন
পড়শি, পাশের ঘর।
এই রেলেরই কান্ড দেখে
সত্যি অবাক হই
একটা ঘরে যাচ্ছে মিশে
আঠাশটা রাজ্যই।
নয় বাঙালি, মারাঠি নয়,
হিন্দু, মুসলমান
উঠলে রেলে সবাই শুধু
যাত্রী হয়ে যান।
শুধু কী রেল? রেললাইনও
অবাক করে বেশ
একটা লোহার পাতে জোড়া
একটা গোটা দেশ।
এই দেশই তো ভারতবর্ষ
প্রাণের স্পর্শ ঠিক
কু-ঝিক-ঝিক কু-ঝিক-ঝিক
কু-ঝিক-ঝিক ঝিক।
সবুজ দ্বীপ
দীপিকা রায়
আকাশের গায়ে রামধনু ওঠে সাতটা রঙের সুর
সেই সুরে যেন মায়াময় এক রুপোলি সমুদ্দুর।
সমুদ্দুরের গর্জন শুনে সীমাহীন উচ্ছ্বাস
ছড়ায় সে সুর আকাশে বাতাসে কৌতুক একরাশ।
এক লহমায় রামধনু রঙ উধাও আকাশ ফাঁকা,
চোখ ধাঁধানো কত সব আলো ঝিলমিল আঁকা-বাঁকা।
চাঁদের আলোয় পালতোলা ঢেউ নামে আর ওঠে হেসে।
কখন আবার সুদূরে মিলায় ভেসে যায় দূর দেশে।
দূরে দূরে কত নৌকো ভাসছে আলো জ্বলে টিপ টিপ
দেখে মনে হয় সাজােনা গোছানো অজানা এক দ্বীপ।
চারদিকে শুধু জল আর জল মাঝখানে লোকালয়
সবুজ দ্বীপের শ্যামলিমা যেন বিমুগ্ধ বিস্ময়।
বসন্ত
শ্যামাচরণ কর্মকার
দখিন হাওয়া দোল দিয়ে যায় পলাশ-শিমুল বনে
দোল দিয়ে যায় কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়ার মনে।
হলদে-সবুজ-লালের শোভা, বসন্তেরই সাজ
ঘুমটা ভাঙায় মনটা রাঙায় এসেই ঋতুরাজ।
কোকিল মাতায় কুহুতানে, সুর তোলে মৌটুসি
পাতাঝরার দিন ফুরোল গাছপালারাও খুশি।
শীতের কাঁপন- রুক্ষতা নেই, জড়তা নেই আর
বসন্তে পাই প্রাণের ছোঁয়া, চনমনে চারধার।
বসন্তদিন রঙ-ঝরা দিন রাঙায় রঙিন ফাগে
এর গায়ে রঙ,ওর গায়ে রঙ হোলির ছোঁয়া লাগে।
রঙের খেলায়, পরব-মেলায় মনটাকে সে দোলায়
বুকে আঁকে সম্প্রীতিসুর, দ্বন্দ্ব - বিভেদ ভোলায়।
মন কেড়ে নেয় বসন্তদিন আর কেড়ে নেয় ঘুম
আবির মেখে খুকু নাচে রুমঝুম, রুমঝুম।
একতারাতেও বসন্তসুর বাজছে বাউলগান
বসন্ত আজ সবার দোরে বুকে খুশির বান।
ইচ্ছে আমার
নীলোৎপল ভট্টাচার্য
ইচ্ছে আমার মুঠোয় নেব
কি যে নেব? তাই জানিনা
কিছু একটা হলেই হলো
ওটাই যে চাই, তা ভাবিনা।
তেলের শিশি জলের বোতল
যা কিছু পাই হাতের কাছে
মুঠোয় ধরে মুখে পুরি
যদিও ধরা নিষেধ আছে।
আমি কি ছাই বুঝি অত
এক রত্তি এইতো আমি
বুঝতে নারি কোনটা সহজ
কোনটা এখন ভীষন দামি।
এইতো আমার একলা খেলা
আমার সঙ্গে তোমরা থাকো
রাত্রি বেলা কপাল জুড়ে
একটি চাঁন্দের জ্যোৎস্না আঁকো।।
পাঠকদের মন্তব্য
250