ছড়া-কবিতা
রাগ
ভবেশ দাশ
শীত এসেছে বলছি বটে
শীত জমেনি তেমন,
কথা দিয়েও রয় না কথা
দিনগুলো সব এমন।
বর্ষাকালে বৃষ্টি কি আর
অঝোরধারায় নামে?
তখনও তো সবাই দেখি
দরদরিয়ে ঘামে।
শিউলি-কাশের বেলা হলে
তবুও কিছু ফোটে,
যে-হাসিতে ফুটতো আগে
সেই হাসি নেই মোটে।
এসব নাকি ঘটছে এখন
আমাদেরই দোষে
যা ইচ্ছে তাই করছি বলেই
আকাশ-বাতাস ফোঁসে।
চাই
অপূর্বকুমার কুণ্ডু
ছেলেটা চলছে পথ খুঁজে খুঁজে, কিন্তু পায় না খুঁজে,
আকাশটা তার ঘন মেঘে ঢাকা পায় না সূর্যালোক।
পথ উঁচু-নিচু, কাঁটা দিয়ে মোড়া, তবুও চলতে হবে,
প্রার্থনা তার কালো মুছে যাক, নতুন সকাল হোক।
ছেলেটা ভাবছে, ভাবছেই শুধু, ভাবনা অন্তহীন,
দুটো চোখে তার স্বপ্ন সাজানো, কবে যে সফল হবে,
এই পথচলা শেষ হবে না কী? আকাশে দুচোখ তুলে—
বলে হে আকাশ, আমার দুচোখে আলো ধরা
দেবে কবে?
সবার মতোই আমারও তো আছে বাঁচবার অধিকার,
তবে আমি কেন সারাদিন শুধু পথ খুঁজে খুঁজে ফিরি।
সকলের মতো ইচ্ছে আমার স্বপ্নের গান গাই,
বলো না কোথায় ঠিক পেয়ে যাবো স্বপ্নের সেই সিড়ি।
শূন্য দুহাত, কিছু নেই, তবু বুকে তো স্বপ্ন আছে,
এই পথচলা শেষ হোক, শোনো আমিও বাঁচাতে চাই,
কে দেবে আমার দুটো কানে আজ বাঁচার মন্ত্রটি যে,
আলো-বাতাসের অধিকার যেন বুক ভরে আমি পাই।
একটি শীতের বিকেল
আশিসকুমার মুখোপাধ্যায়
আকাশে তখনো মিলিয়ে যায়নি
সূর্যাস্তের আলো
ঠিক তক্ষুনি ঝিরঝিরে হাওয়া
হিম-দাঁতে কামড়ালো।
অমনি লড়ায়ে নেমেও পড়ল
শাল সোয়েটার টুপি
এ হেন একটি বিকেলের কথা
বলি আমি চুপিচুপি।
প্রজাপতি-শিশু জুটে যায় মাঠে
লাল জামা নীল জামা
টুকটুক করে লাঠি হাতে হাঁটে
পরমানন্দ মামা।
সার্কাসে যায় ওদিকে কেউ বা
কারো খেলাতেই মতি
কেউ মানে, রুবি রুকসানা রণি
ফিরদৌস দেবারতি।
টিউশন থেকে কটা সাইকেল
সাঁই সাঁই ফিরে আসে
অভাবিত জয়ে ক্রিকেটের মাঠ
ফেটে পড়ে উল্লাসে।
তবে বলে রাখি, করছিনা আমি
অযথা শীতের স্তুতি
আসলে শীতের বিকেল মানেই
অনন্য অনুভূতি।
এই বিকেলই তো ছোঁয় বরিশাল
কাঁথি কলকাতা ঢাকা
কী আশ্চর্য, সবখানে একই
শীতের সুরভি আঁকা।
বাতিল ছড়া
চন্দন নাথ
ছড়াটা পরেনি চাদর-টাদর,
জ্যাকেট বা সোয়েটার
তা হলে ‘শীতের ছড়া’ এ-ছড়াকে
বলব কী করে আর!
কনকনে শীতে টুপিও পরেনি,
ঢাকেনি তো দুটো কান
তাই ওকে যত দেখছি
ততই হচ্ছি সন্দিহান।
পায়ে মোজা নেই, হাত দুটো ফাঁকা…
নেই তাতে দস্তানা,
তাইতো ‘শীতের ছড়া’ বলে একে
মানব না আমি...না না!
শিশিরে ভেজেনি মোটেও ছড়াটা,
গায়েও তো নেই তার
রঙ বা গন্ধ প্যানজি, ডালিয়া,
চন্দ্রমল্লিকার!
তা ছাড়া এ-ছড়া পারছে কি দিতে
নলেন গুড়ের স্বাদ?
না যদি পারে তো ‘শীতের ছড়া’-র
লিস্টি থেকে এ বাদ।
ঘুমপাড়ানির গান
গৌতম হাজরা
ওই দূরে আছে কলকল করে
ছুটে-চলা এক নদী,
আছে কুঁড়েঘর, রোদ ঝলমল
হেঁটে চলে যাও যদি।
ওইখানে আছে রামধনু রঙ
তুলি টান দিয়ে আঁকা,
খুশির সানাই বেজে ওঠে দূরে
মেঠোপথ আঁকাবাঁকা।
ওই দূরে দেখ প্রজাপতি ওড়ে
রঙিন ফুলের কাছে,
চারিদিকে যেন রূপকথা ছবি
ঝলমলে হয়ে আছে।
রাত হয়ে এলে জ্যোৎস্নায় যেন
আলোছায়া দেয় টান,
মনে হয় যেন ছোট গ্রাম গায়
ঘুমপাড়ানির গান।
বাসা
উৎপলকুমার ধারা
রোদ ঝলমল সর্ষে ক্ষেতে
উদার হাওয়ার দিনে
শালিক ছানা খুঁটতে দানা
আলপথ নেয় চিনে!
স্বর্ণরঙের ধানের শীষে
ভোরের শিশির ঝরে
দোয়েল রানীর আঁচলখানি
হাওয়ায় নড়েচড়ে!
বাবুই পাখির এবার ঠিকই
মিটবে মনের আশা
গাছের মাথায় তালের পাতায়
বুনছে সুখের বাসা !!
শীতের সুর
শ্যামাচরণ কর্মকার
নেই আর হাঁসফাঁস, গরমের দিন
হিম ঝরে টুপটাপ কাঁপে কাছ-দূর
বরফের মতো জল হাত চিনচিন
উত্তুরে হাওয়া বয় শীত ঢালে সুর।
আবছায়া পথঘাট কুয়াশায় ঢাকা
মাঠে মাঠে কপি-শিম পালঙের হাসি
পাখি খোঁজে রোদ্দুর হিমভরা পাখা
শীত এল, এল শীত, বাউল উদাসী।
ভোমরার গুনগুন ফুলেদের বনে
মেঠো দূর রাখালের, বাজে একতারা
পিকনিক-বইমেলা খুশি আঁকে মনে
দিঘা-উটি ডেকে যায় বেড়ানোর তাড়া।
ঠকঠক কাঁপি তবু ভালোবাসি শীত
খাওয়া দাওয়া, ঘুমটুম, সুখে ঘোরাঘুরি
সব্বাই খুঁজি তাই শীতসঙ্গীত
শীত মিঠে, কোত্থাও নেই তার জুড়ি!
পাঠকদের মন্তব্য
250