ছড়া-কবিতা
আমরা বড় নই
আশিসকুমার মুখোপাধ্যায়
নিষ্ঠা ভরে মেঘের কাছে কেউ চাইনি জল
কেউ বলিনি হাওয়াকে তুই নিজের মতো চল
কেউ দিইনি নদীকে তার এগিয়ে যাওয়ার পথ,
বুঝিনি কেউ মেঘ বাতাসই আসলে সম্পদ।
কেউ বলিনি ও-মাটি ঠিক এমনি থাকিস তুই
চাইনি তো কেউ হাসুক পলাশ, ফুটুক বেলি-জুঁই
কেউ বলিনি পাহাড়কে তুই এমনি অটল থাক
বরং ওদের কষ্ট দেখেও থেকেছি নির্বাক।
কেউ ভাবিনি চাঁদ কী করে এত মধুর হয়
কী করে বা সন্ধ্যা সকাল রাখে সমন্বয়
কেনই বা হয় ধ্রুবতারা এতটা উজ্জ্বল,
জানি না কেউ উত্তর এর, খুঁজিনি এর তল।
কে চেয়েছি ? পাখিরা গাক নিজের মতো গান
কে বলেছি, রাত্রিকে তুই স্বপ্ন বয়ে আন
কে ভেবেছি, আকাশটা থাক এমনি ঘন নীল,
ওদের দেখেই দিই আমরা মনের ঘরে খিল।
কেউ দেখিনি কী আশ্চর্য ভোরের আলোর রং
ছাড়াইনি কেউ মনের ভেতর জমাট বাঁধা জং
কেউ শুনিনি স্কুলের পরে ছুটির কোলাহল,
জল না দিয়েই গাছে, আমরা চাচ্ছি গাছের ফল।
কেউ বলিনি মাটি দিয়েই মাটির ছবি আঁক
পিটিয়ে গেছি বরং আমরা নিজেই নিজের ঢাক
কেউ বলিনি ফুল পাতারাই বন্ধু কুটুম সই
ওদের থেকে এক ইঞ্চিও আমরা বড়ো নই।
রাতজাগা
সুখেন্দু মজুমদার
দিনভর খুঁজি দেখা পাই যদি
ছিটেফোঁটা হয় হোক,
রাত নামলেই এসে কেন ওরা
জুড়ে থাকে দুই চোখ।
স্বপ্নের কথা শুনবে কি কেউ
হাতে কি সময় আছে,
যে যার মতন কাজে ডুবে আছে
যাই বল কার কাছে!
স্বপ্নরা জানি বেজায় লাজুক
নিচু স্বরে গান গায়,
গাছের পাতাতে রোদ নেমে এলে
চোখ থেকে সরে যায়।
বকের পাখায় রোদ ফেরে যেই
শুরু করে ডাকাডাকি,
ইশারায় বলে, গোটা রাতজুড়ে
আমরাই জেগে থাকি।
রোদ বৃষ্টি
গৌতম হাজরা
ছেলেটির নাম রোদ
মেয়েটির নাম বৃষ্টি
দু’জনকে দেখতে হলে
দাও আকাশে দৃষ্টি।
রোদ কিন্তু দুষ্টু ভীষণ
বৃষ্টি দারুন মিষ্টি
ঝমঝমিয়ে নামলে দেখি
ঝাপসা যে হয় দৃষ্টি।
রোদ বৃষ্টি দু’জনাতে
বানায় দেখি লিস্টি
ছুটির দিনে জমায় তারা
দারুণ দারুণ ফিষ্টি।
ষোলখানা কিসে
বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী
আহ্লাদে আটখানা
ষোলখানা কিসে
সারাদিন খোঁজে হারু
ভীড় বাসে মিশে।
দিন যায় রাত যায়
চুলে ধরে পাক
লোকে বলে হারু নাকি
তীর্থের কাক।
সাত-পাঁচ শুনে হারু
ফের বাসে চড়ে
প্রতিদিন গ্রামে যায়
থাকে না সে ঘরে।
আহ্লাদে আটখানা
ষোল পেলো কিসে
সকালে সূর্য হাসে
ধানের ঐ শীষে।
মিলং টিলং
প্রদীপ আচার্য
চোখ দু’টো তোর ক্যান রে লাল?
মাংস ঝাল।
কে খাওয়ালো অত্ত ঝাল?
অনিতা পাল।
কোথায় যাবি আগামিকাল?
নৈনিতাল?
ব্যবসার কে ধরবে হাল?
মাখনলাল।
অবস্থা কি বেসামাল?
টালমাটাল।
পুঁজি কি কিছু ঢালবি কাল?
হাঁড়ির হাল।
করছেটা কী নিখিল পাল?
তিলকে তাল।
কালকে কোথায় পাঠালি মাল?
সেই ঘাটাল।
কী পাঠালি শুধুই চাল?
মুসুরডাল।
বিশু কিন্তু কেটেছে খাল?
পোড়া কপাল।
কুমির ডেকে আনার তাল
ফেলুক জাল।
মেঘ বালিকা
বিদ্যুৎ মিশ্র
মেঘ বালিকা আয় না কাছে গল্প করি,
সত্যি কথা একটা ছিল বনের পরী।
এমন সুরে গাইত সে গান ভাটিয়ালি,
মুগ্ধ হয়ে শুনত বনের গাছ-গাছালি।
হঠাৎ সেদিন আঁধার করে বাদল নামে,
ভয় পেয়ে যায় সবাই তখন সারা গ্রামে।
পরীর গানেও ব্যাঘাত ঘটে সবাই যে চুপ
কেউ দেখেনি নিস্তব্ধতার এমনটা রূপ।
খানিক পরেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আসে,
জল জমে যায় সবুজ পাতা এবং ঘাসে।
সেদিন থেকে বর্ষাকালের হয় সূচনা,
টাপুর টুপুর বৃষ্টি ঝরে আর কিছু না।
নদীর জলে প্লাবন আসে ভাসায় তরী,
ভাটিয়ালি সুর তোলে ঠিক বনের পরী।
মেঘবালিকা, বৃষ্টি বাদল তুফান ঝড়ে
সেই পরীটা আজও আছে মনের ঘরে।
পাঠকদের মন্তব্য
250