ছোটোদের চাঁদের হাসি / জেনে নিতে মানা নেই / জানুয়ারি ২০২৫

মেলা বই : বই মেলা

 

'মেলা' শব্দটির মানে অনেক, কিন্তু আমরা 'মেলা' বলতে বুঝি যেখানে আনন্দের নানা উপকরণ মেলে। আমাদের পালা-পার্বণ, উৎসব ঘিরে নানা ধরনের মেলা সারা বছর ধরে চলতে থাকে। যেমন–রথের মেলা, চড়কের মেলা, সরস মেলা, হস্তশিল্প মেলা, পৌষ পার্বণের মেলা। শান্তিনিকেতনের 'পৌষমেলা' বা গঙ্গা সাগর' মেলার কথাও শুনেছ নিশ্চয়ই তোমরা। তবে,  যারা বই ভালোবাসে, তাদের কাছে 'কলিকাতা পুস্তক মেলা' সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এই মেলা এখন 'আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তক মেলা'র পরিচিতি পেয়েছে। 'বইমেলা'য় পৌঁছানোর আগে 'বই' নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। কারণ, বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ 'বই'। ছোটবেলায় অক্ষর বা ভাষা শেখার জন্য আমাদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। বই মাত্রই জ্ঞান এবং আনন্দের যোগানদার। সেটা স্কুলের পাঠ্যবই হোক বা গল্প-কবিতা-ছড়ার বই ।  

 

 

এবার জানা যাক, 'বই' জিনিসটি এলো কীভাবে? মানুষ প্রাচীনকালে তার সুখ-দুঃখ অভিজ্ঞতার কথা বলবার জন্য পাহাড়ের গায়ে,পাথরের বুকে, পোড়া মাটির প্লেটে লিখতে শুরু করে। কিন্তু, সে তো বেশি লোকের কাছে পৌঁছানোর উপায় নেই। এরপর মানুষ তালপাতা, ভূজপত্র এবং সব শেষে প্যাপিরাস থেকে পেপার আবিষ্কার করায় বই  অনেকটা সহজলভ্য হয়ে ওঠে। যতদূর জানা যায়, চীনের ‘ডায়মন্ড সূত্র’ বইটি সবচেয়ে প্রাচীন বই, যা ৮৬৮ সালে লেখা হয়। বই তৈরির ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে ১৮৪০ সালে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ছয় শত বছর আগে, জোহান্স গুটেনবার্গ যখন প্রথম মুদ্রণযন্ত্র নির্মাণ করেন। ছাপাখানা বইয়ের জগতে আলোড়ন তোলে–বই ক্রমে মানুষের হাতে হাতে ঘুরতে শুরু করে। মানুষের সভ্যতায় বইয়ের দান অপরিসীম। বই হলো মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। তার কোনো দাবি নেই, হাসিমুখে সে মানুষকে সঙ্গ দেয়। ঘরে বসেই পৃথিবীর নানা প্রান্তের ইতিহাস, ভূগোল, জ্ঞান-বিজ্ঞানের খবর আমরা পাই বইয়ের থেকেই।

 

 

এবার বইমেলা প্রসঙ্গে আসা যাক। আমাদের কলকাতা পুস্তকমেলা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। এ বছর এই মেলা ৪৮তম মেলা। প্রথমে কলকাতা ময়দানে, তারপর বাইপাস সংলগ্ন মিলন মেলা প্রাঙ্গণ, একবার সল্টলেক স্টেডিয়াম ঘুরে বইমেলা এখন বিধান নগর মেলা প্রাঙ্গণে স্থায়ী হয়েছে। প্রতিবছর কলকাতা বইমেলার আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। গত বছর হাজারের ওপর স্টল হয়েছিল। পৃথিবীর নানা দেশ তাতে অংশ নিয়েছিল। কত লোক এসেছিল মেলায়? প্রায় ২৯ লক্ষ মানুষ অংশ নিয়েছিল ১২-১৩ দিনের এই মেলায়। এবার এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে ২৮ জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারের বইমেলায় থিম দেশ হল ‘জার্মানি’ অর্থাৎ জার্মানির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

 

এখন বইমেলায় একসঙ্গে অনেক প্রকাশকের অনেক বই দেখবার সুযোগ রয়েছে। তেমনি বিভিন্ন প্রদর্শনী, আলোচনা সভা থেকেও আমরা নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারি। বই হল পাঠক-লেখক-মুদ্রক এবং প্রকাশকদের মিলনস্থল। তোমরা সকলেই নিশ্চয়ই অধীর অপেক্ষায়, কবে বইমেলা শুরু হবে, তারজন্য । সকলেই বাড়ির বড়দের সঙ্গে বইমেলায় যাবে নিশ্চয়ই ! দেখ তো, এবারের বইমেলা থেকে তোমরা কী জানলে, কী শিখলে কতটা আনন্দ পেলে, ‘ছোটোদের চাঁদের হাসি’র জন্য লিখে ফেলতে পার কিনা!

 


পাঠকদের মন্তব্য

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up