ছোটোদের চাঁদের হাসি / জেনে নিতে মানা নেই / ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শ্রদ্ধায়-স্মরণে জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও গ্যালিলি

[জন্ম : ১৫ই ফেব্রুয়ারি ১৫৬৪

প্রয়াণ : ৮ই জানুয়ারি ১৬৪২]

 

 

এই পৃথিবীতে নানান সময়ে এমন কিছু মহামানব জন্ম গ্রহণ করেছেন, যাঁরা বিজ্ঞানকে অন্যস্তরে ভাবতে শিখিয়ে মানবসভ্যতাকে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছিলেন! আজ তোমাদের তেমনই একজন মহান জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও গ্যালিলির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। এই প্রসঙ্গে আরও কয়েকজন বিজ্ঞানীর কথাও তোমাদের জেনে রাখা দরকার, যাঁরা কঠিন অধ্যাবসায়,কর্মনিষ্ঠা ও পরিশ্রমে বিজ্ঞান ও দর্শনকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছিলেন। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক পোলিশ বিজ্ঞানী কোপার্নিকাসের (১৪৭৩-১৫৪৩) মহাবিশ্ব সংক্রান্ত তত্ত্ব এবং তথ্য সামনে আসার আগে পর্যন্ত ধারণা ছিল মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থলে স্থির পৃথিবী, তাকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে চাঁদ-সূর্যের মতো নানান গ্রহ-উপগ্রহ-নক্ষত্র! গ্রীক বিজ্ঞানী টলেমিও এই ধারণার সমর্থক ছিলেন।

 

মহাকাশ গবেষক কোপার্নিকাস তত্ত্ব এবং তথ্য (কোপারনিকাস মডেল) দিয়ে বললেন, পৃথিবী স্থির নয়। মহাবিশ্বের কেন্দ্রে আছে স্থির নক্ষত্র সূর্য। তাকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে (অরবিট) প্রদক্ষিণ করছে পৃথিবী, শুক্র ইত্যাদি গ্রহ। রোমান ক্যাথলিকরা কোপারনিকাসের এই তত্ত্ব সটান খারিজ করে দিল। আজীবন খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি উৎসর্গিত মানুষ কোপারনিকাসের শত্রু হয়ে দাঁড়াল তারা। শুধু তাই নয়, নিজের আবিষ্কৃত মডেলের ওপরে লেখা একটি বই 'অন দ্য রেভোলুশনস অফ হেভেনলি স্ফিয়ারস' তার জীবনকালে প্রকাশ করাও সম্ভব হয়নি।

 

 

এরপরে ইটালিয়ান দার্শনিক ও বিজ্ঞানী ব্রুনো (১৫৪৮-১৬০০) মহাকাশ স্টাডি করে কোপার্নিকাসের তত্ত্বকে সমর্থন করলেন এবং আরো জানালেন মহাকাশ 'ইনফাইনাইট' (অসীম) এবং আমাদের সোলার সিস্টেমের মত আরও অনেক সোলার সিস্টেম রয়েছে মহাকাশে। ঝাঁপিয়ে পড়ল রোমান ক্যাথলিকরা–ব্রুনোকে শাসানো হলো, ওই তত্ত্ব ভুল, একথা স্বীকার করতে। ব্রুনো তাঁর তত্ত্ব থেকে একচুলও সরলেন না। বিচারে তাঁকে দগ্ধে দগ্ধে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

 

১৫৬৪ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ইটালির পিসায় জন্মগ্রহণ করেন আধুনিক বিজ্ঞানের জনক গ্যালিলিও গ্যালিলি। তিনি উন্নত মানের টেলিস্কোপ নির্মাণ করে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করে কোপার্নিকাসের মডেলের কিছু ত্রুটি সংশোধন করে কোপার্নিকাসের তত্ত্বকেই সঠিক বলে ঘোষণা করলেন। চাঁদের গর্ত বা ক্রেটার-এর অস্তিত্বের কথা তিনিই প্রথম জানালেন। প্রত্যাশিতভাবে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ল রোমান ক্যাথলিক ও রি-ফর্মড চার্চ! অনেক রকম ভাবে চাপ সৃষ্টি করেও গ্যালিলিওকে তাঁর তত্ত্ব থেকে সরানো গেল না। তাঁকে আমৃত্যু গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল।

 

শোনা যায় মৃত্যুকালে তাঁর শেষ উচ্চারণ ছিল, অ্যান্ড ইয়েট মুভস–! অবশেষে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের সমর্থনে স্বীকৃতি পায় কোপারনিকাস-ব্রুনো-গ্যালিলিওর মহাকাশ তত্ত্ব।

 

ছবি ঋণ ইন্টারনেট


পাঠকদের মন্তব্য

দীপঙ্কর গোস্বামী লিখেছেন... ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
গ্যালিলিও গ্যালিলি লেখাটি প্রাঞ্জল ভাষায় খুব সুন্দর হয়েছে। এই সংখ্যার অন্যান্য রচনাও ভাল লাগল।

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up