কুকুর পাগলা হয়ে ওঠে কেন ?
প্রকৃতি চট্টোপাধ্যায়
ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই কুকুর খুব ভালোবাসো। কুকুর এমনিতে খুব ভালো, আর বন্ধু তো বটেই। তবে, কুকুর যদি পাগল হয়ে ওঠে, তা হলেই ভীষণ বিপদ। পাগলা কুকুরের কামড়ানোর পর ভালো মতো চিকিৎসা না হলে মানুষ মরেও যেতে পারে।
কুকুরের জলাতঙ্ক রোগ (rabies/ৱ্যাবিজ) হলে তখন সে পাগল হয়ে যায়। জলাতঙ্ক রোগের ভাইরাস বাতাসে ভেসে বেড়ায় বা অন্য কোনও জন্তুর দেহে থাকে। আর তার থেকে কুকুরের দেহে কোথাও কেটেকুটে গেলে সেখান দিয়ে ভাইরাস ঢুকে পড়ে। চার বা ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই ভাইরাস কাজ আরম্ভ করলে কুকুর ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়তে থাকে, জ্বর দেখা দেয়, খিদে কমে যায়। ভাইরাস মস্তিষ্কে আক্রমণ করার পর কুকুর বিশ্রী রকম উত্তেজিত হতে থাকে, ঘোঁৎ-ঘোঁৎ করে, মুখ দিয়ে শুধু লালা ঝরে পড়ে। ঠিক এই সময়টাতে কুকুর কামড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে আর তখনই তাকে চিহ্নিত করা হয় ‘পাগলা কুকুর’। এই রকম সব লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে কুকুরটা মারা যায়।
পাগল কুকুরের মুখের লালায় থাকে জলাতঙ্ক রোগের ভাইরাস। আর তখন যদি সে মানুষকে কামড়ে দেয় তাহলে সেই ক্ষত দিয়ে ভাইরাস শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কামড় খাওয়ার পর অবসাদ, অবসন্নতা এইসব উপসর্গ ফুটে ওঠে। তারপর আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর হয় আর উৎকন্ঠায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ঘুম একদম কমে যায়, সে সবসময় ভয় পায়। গলার পেশী ঢিলে হয়ে পড়ায় খাওয়া-দাওয়ায় অসুবিধা হতে থাকে। সব চেয়ে বড়ো উপসর্গ হলো জল দেখে ভয় পাওয়া। এই জন্যই রোগটার নাম জলাতঙ্ক–ইংরেজিতে বলে Hydrophobia, মানে জলে ভয়।
পাগল কুকুর কামড়ানোর পর একমাস থেকে তিনমাসের মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। দেহের ওপরের অংশে, মানে গলায়, বুকে, মাথায় কামড়ালে সংক্রমণ আরো তাড়াতাড়ি হতে পারে। কুকুর যদি কখনো কামড়ায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে তিনদিনের মধ্যে অ্যান্টি-ৱ্যাবিজ (anti-rabies) ইনজেকশন দেবার ব্যবস্থা করা উচিত। পাঁচদিন পর্যন্ত কুকুরটাকে চোখে চোখে রাখতে হবে। এর মধ্যে মরে না গেলে, জানা যাবে যে ওটা পাগল কুকুর ছিল না। তখন চিকিৎসাও একই সঙ্গে বন্ধ করা যাবে ।
একটা মজার কথা হলো, সাধারণ লোকের ধারণা যে পাগল কুকুর কামড়ালেই চোদ্দটা ইনজেকশন নিতে হয়। তা কিন্তু নয়। কেন না, আসল ঘটনা হলো যে পাগল কুকুরের দেহে চোদ্দ রকমের আলাদা আলাদা ভাইরাস থাকা সম্ভব। তাই ডাক্তাররা ওই চোদ্দ রকমের আলাদা ইনজেকশন দিয়ে থাকেন সতর্কতা হিসাবে, যাতে সব রকম প্রতিষেধকই আক্রান্ত লোকটির শরীরে যেতে পারে। কামড়ানোর পর পাগল কুকুরটাকে ধরতে পারলে, সেটাকে ডাক্তারি পরীক্ষা করে জানা যেতে পারে যে সঠিক কোন জাতের ভাইরাস তার কামড়ে সংক্রমিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ৱ্যাবিজের ভাইরাস শেয়াল, ইঁদুর বা বেড়ালও তাদের সঙ্গে বয়ে বেড়াতে পারে। তবে, তাদের সবার কাছ থেকে রোগটার ছড়িয়ে পড়ার ভয় তেমন থাকে না।
ছবি ঋণ ইন্টারনেট
পাঠকদের মন্তব্য
250