ছোটোদের চাঁদের হাসি / ইতি সম্পাদক / নভেম্বর ২০২৩

এক অনির্বচনীয় যাত্রাপথ

তোমরা শিশু, ফুলের কুঁড়ি,

                 ভোরের আলো, চাঁদের হাসি।

উঠবে ফুটে তারার মতো,

                  ছড়াবে রঙ রাশি রাশি…।

 

২০০৪ সালে সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিল্পকলা ইত্যাদি নানা জগতের সম-মনোভাবাপন্ন কয়েকজন মিলে আমরা গড়ে তুলি 'উদ্ভাস শিশু ভাবনা কেন্দ্র'। উদ্দেশ্য, শিশুদের সার্বিক বিকাশে মনের জানলা খুলে দেওয়া। তারই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ, একটি শিশুদের উপযোগী পত্রিকা প্রকাশ। এই ভাবনা থেকেই জন্ম 'ছোটোদের চাঁদের হাসি' পত্রিকা। ২০০৪ সালের জুলাই মাস থেকে একইসঙ্গে শুরু হলো 'উদ্ভাস শিশু ভাবনা কেন্দ্র' এবং 'ছোটোদের চাঁদের হাসি'র পথ-পরিক্রমা। প্রথম বছর ষান্মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হলেও পরের বছর থেকে ত্রৈমাসিক পত্রিকা হিসেবে নিয়মিত প্রকাশিত হয় 'ছোটোদের চাঁদের হাসি'।

 

২০১৪ সালে দশবছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে, সারা বছর ধরে নানা বর্ণময় অনুষ্ঠানের আয়োজন ছাড়াও প্রকাশিত হয় 'ছোটোদের চাঁদের হাসি'র দশ বছরের সেরা সংকলন। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪-এ 'ছোটোদের চাঁদের হাসি'র কুড়িবছর পূর্তিকেও স্মরণীয় করে রাখতে, সারা বছর ধরে নানা অনুষ্ঠান এবং 'ছোটোদের চাঁদের হাসি'র কুড়ি বছরের সেরা সংকলন প্রকাশিত হবে। এরই পাশাপাশি আমাদের প্রিয় শিশু-কিশোর পাঠকদের জন্য,'ছোটোদের চাঁদের হাসি'র এই ডিজিটাল  সংস্করণ সগৌরবে চলতে থাকবে। আজ, ১৪ই নভেম্বর ২০২৩, শিশুদিবস থেকে 'ছোটোদের চাঁদের হাসি' ডিজিটাল সংস্করণের পথ চলা শুরু হলো, প্রকাশিত হবে মাসিক পত্রিকা হিসেবে।

 

এমন একটি দিনে, বহু পুরোনো স্মৃতি ভিড় করে আসছে। 'ছোটোদের চাঁদের হাসি'র প্রথম সংখ্যা প্রকাশের আগে যেমন ভালোলাগায় আপ্লুত ছিলাম, তোমাদের হাতে কিছু তুলে দেবার আবেগে–তেমনই উদ্বেগে ছিলাম ভবিষ্যতের কথা ভেবে। মনে হয়েছিল,পারব তো, নিয়মিত ভাবে 'ছোটোদের চাঁদের হাসি' প্রকাশ করতে ? আমার উদ্বেগকে ভুল প্রমাণ করে, আজ এই প্রাক-বিশ বছর পূর্তির লগ্নেও অমলিন 'ছোটোদের চাঁদের হাসি'। এরজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই তোমাদের অভিভাবক এবং 'ছোটোদের চাঁদের হাসি'র শুভাকাঙ্খীদের। কৃতজ্ঞতা জানাই 'ছোটোদের চাঁদের হাসি'র লেখকদের, যাঁরা তাঁদের সেরা লেখায় সমৃদ্ধ করেছেন প্রতিটি সংখ্যাকে এবং 'উদ্ভাস শিশু ভাবনা কেন্দ্র'র জন্মলগ্ন থেকে যুক্ত সহমর্মী, সহযাত্রী বন্ধুদের।

 

'উদ্ভাস শিশু ভাবনা কেন্দ্র'র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি  অধ্যাপক অরুণকুমার বসু এবং সহ-সভাপতি কবি রানা চট্টোপাধ্যায় আজ আমাদের মধ্যে নেই। তাঁরা শুধু উদ্ভাস শিশু ভাবনা কেন্দ্রের নানা কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তাই নয়,'ছোটোদের চাঁদের হাসি'র প্রথম সংখ্যা থেকে শুরু করে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত নানা লেখায় সমৃদ্ধ করে তুলেছেন চাঁদের হাসিকে। আজ আমাদের ডিজিটাল মাধ্যমে পথচলার শুরুতে তাঁদের প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। সংস্থার প্রতিষ্ঠা-লগ্ন থেকে অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে সবসময় পাশে থেকেছেন প্রয়াত নৃত্যগুরু পি. গোবিন্দন কুট্টি ও প্রয়াত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁদের প্রতিও আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। সংস্থার জন্মলগ্ন থেকে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন প্রয়াত দিলীপকুমার দেব ও দীপিকা বসু। তাঁদের অসামান্য অবদান অবশ্যই স্মরণীয়। শ্রদ্ধা জানাই প্রয়াত নৃত্যগুরু আদিত্য মিত্রকে, যিনি পরম শুভানুধ্যায়ী হিসেবে প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের পাশে ছিলেন।

 

যাঁরা আজ আর আমাদের মধ্যে নেই, তাঁদের সকলের প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হলো আমাদের 'ডিজিটাল' পথচলা। তাঁদের আশীর্বাদ আমাদের পাথেয়। এছাড়াও আমরা হারিয়েছি, এমন কয়েকজন কবিকে, যাঁরা 'ছোটোদের চাঁদের হাসি'র নিয়মিত লেখক ছিলেন। 'ছোটোদের চাঁদের হাসি'তে পূর্ব-প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা থেকে তাঁদের কয়েকজনের লেখা কবিতা প্রথম ডিজিটাল সংখ্যায় পুনর্মুদ্রণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছি।

 

প্রসঙ্গত, বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের নাম। সংস্থার জন্মলগ্ন থেকে অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে সবসময় পাশে থেকেছেন এবং আজও আমাদের সঙ্গে আছেন। বর্তমানে 'উদ্ভাস শিশু ভাবনা কেন্দ্র' ও 'ছোটোদের চাঁদের হাসি'র উপদেষ্টা হিসেবে আছেন অশোককুমার মিত্র, সভাপতি শ্যামলকান্তি দাশ, সহ-সভাপতি উৎপল ঝা। 'ছোটোদের চাঁদের হাসি'র সম্পাদক মন্ডলীতে আছেন কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্য ও  অজন্তা সিনহা। সদস্যরা হলেন রেমা ভট্টাচার্য, তৃপ্তি সেন, শতাব্দী চট্টোপাধ্যায়, প্রকৃতি চট্টোপাধ্যায়, লীনা বসু, জয়ন্তী ঠাকুর ও প্রীতিকুমার সেন।

 


আজ শিশুদের দিন

আজ শিশুদিবস। আজ ছোটদের প্রিয় চাচা নেহরুর জন্মদিন। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর জন্ম ১৮৮৯ সালের ১৪ই নভেম্বর–মৃত্যু ২৭শে মে, ১৯৬৪। সেই সময় দেশে চলছে ব্রিটিশ শাসন। পরাধীনতার নাগপাশ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে দেশবাসীকে। দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মোচনে একদিন গর্জে উঠল দেশবাসী। শুরু হলো স্বাধীনতা আন্দোলন। এই আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন নেহরুজি।

 

১৯৪৭ সালে ২০০ বছরের পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে স্বাধীন হলো দেশ। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন জওহরলাল নেহরু। তিনি ছিলেন প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতাবাদী ও সমাজমনস্ক একজন মানুষ। তিনি বিশ্বাস করতেন শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত। তাই, তাদের মৌলিক অধিকারগুলি আগে হাতে তুলে দিতে হবে। শিশুরা ছিল তাঁর বড়ই প্রিয়। তিনিও শিশুদের। তাঁর চাচা নেহরু নামকরণ এই সূত্রেই।

 

১৯৫১ সাল। ভারতের অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে তেমন কোনও সুষ্ঠু ব্যবস্থা, পরিকল্পনা বা পরিকাঠামো নেই, এটা উপলব্ধি করেন ভি এম কুলকার্নি। ইনি ছিলেন রাষ্ট্রসংঘের একজন সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক কর্মী। সেই সময় ইংল্যান্ডে রানি এলিজাবেথের জন্মদিনকে 'ফ্ল্যাগ ডে' হিসেবে পালন করা হতো, তাদের 'সেভ দ্য চাইল্ড ফান্ড'-এর জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। এই বিষয়টি থেকেই কুলকার্নির ভাবনায় আসে, পন্ডিত নেহরুর জন্মদিনটিকেও এখানে 'ফ্ল্যাগ ডে' হিসেবে পালন করা যায়। এতে শিশুদের উন্নয়নের স্বার্থে যে এনজিও-গুলি কাজ করছে, একইভাবে 'ফ্ল্যাগ ডে'-তে অর্থ সংগ্রহ করে, তাদের ফান্ডে দেওয়া যাবে। এটি ছিল আলোচ্য প্রেক্ষিতে প্রথম ধাপ।

 

১৪ নভেম্বর তখনও পর্যন্ত উদযাপিত নেহরুজির জন্মদিন রূপে। এটা ঠিক, এই উদযাপনে শিশুদের একটা বিরাট ভূমিকা থাকত। দেশজুড়ে খেলাধুলার আয়োজন করা হতো, যেখানে অংশগ্রহণ করত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিশুর দল। এরপর ১৯৫৪ সালের ২০ নভেম্বর দিনটিকে রাষ্ট্রসংঘ শিশুদিবস পালনের জন্য ঘোষণা করল। ভারতেও তখন এই দিনটিই শিশুদিবস হিসেবে পালিত হতো। ১৯৬৪ সালের ২৭শে মে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর, সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শিশুদের প্রিয় চাচা নেহরুর জন্মদিনটিকেই প্রতি বছর ভারতে শিশুদিবস হিসেবে উদযাপিত করা হবে।

 

সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত সারা দেশে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এই দিনটিকে পালন করা হয়। শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সার্বিক উন্নয়নে এই দিনটি উৎসর্গীকৃত। তার অধিকার, সর্বোপরি তার ভবিষ্যৎ সুরক্ষার প্রতীক এই দিন। এই দিনের যত পালন, আয়োজন, উদযাপন–সবই শিশুদের মঙ্গলার্থে। ১৪ই নভেম্বর শুধুই শিশুদের দিন।


পাঠকদের মন্তব্য

অজন্তা সিনহা লিখেছেন... ০৯ই ডিসেম্বর, ২০২৩
অভিনন্দন !! শুভেচ্ছা !!!
উত্তরে Admin লিখেছেন... ০৯ই ডিসেম্বর, ২০২৩
Thanks
সঞ্জিতকুমার সাহা লিখেছেন... ০৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
ভালো হয়েছে সম্পাদকীয়। স্মৃতিতর্পনের মাধ্যম যাত্রা শুরু ভালো লাগলো। অতীতে পা রেখেই তো বর্তমানের পথ চলা। এর উপরেই ভবিষ্যতের ভিত নির্মিত হয়। আশা করি কাণ্ডারি ঠিকভাবেই এগোবেন। তিনি প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ। শুভেচ্ছা সবাইকে।

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up