ছোটোদের চাঁদের হাসি / গল্পগাথা / জানুয়ারি ২০২৫

তিয়ানের স্বপ্ন

তিয়ানের মজাই লাগছিল খুব। একটা বাচ্চা হাতি তার পাশে এসে নিচু হয়ে বসে পড়ল। তিয়ান জানে এই জঙ্গলে আরও অনেক হাতি, গন্ডার, হরিণ এমনকি বাঘও আছে। এই জঙ্গলটার  কথা জানত না সে। কেউ-ই জানে না এ জঙ্গলের খবর। স্কুল ছুটির পর, লাগোয়া পার্কটায় রুচিরা ও কোয়েলের সঙ্গে খেলছিল। তিয়ানের মা স্কুল-গেটের বাইরে অপেক্ষা করছেন, তাও জানত সে। কিন্তু বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছিল না তখন। রুচিরা খেলতে খেলতে বাস্কেট বলটা যখন ওপরের দিকে জোরে ছুড়তে যায়, হাত ফসকে পাশের শিমুল ও কৃষ্ণচূড়া গাছের পিছনের  ড্রপ খেতে খেতে গড়িয়ে গেল। তিয়ান এক দৌড়ে সেখানে গিয়ে বলটা আর খুঁজে পায় না। না পেয়ে সে খুঁজতে খুঁজতে অনেকটা ভিতরে ঢুকে যায়।

 

শাল-মহুয়া-শিশু-আমলকী গাছের ভিতর দিয়ে, এদিক–ওদিক করতে করতে একসময় পথ হারিয়ে ফেলে তিয়ান। অন্ধকারও নেমে এসেছে তখন। কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না সে। এমন সময় ওই পুচকে হাতিটা তার সামনে এসে নিচু হয়ে তিয়ানকে তার পিঠে উঠে বসতে বলছে। তিয়ান বুঝতে পেরে উঠে পড়ল তার পিঠে। হয়তো তাকে জঙ্গলের বাইরে পৌঁছে দিতেই এসেছে ছোট্ট হাতি। ভালোভাবে উঠে বসে তখন। ভয়ও লাগছে, যদি পড়ে যায়! এতক্ষন খেয়াল করেনি। এখন দেখতে পেল, বাচ্চাটার বাবা-মা-ও তার পাশে পাশে হাঁটছে। অবাকই হয় তিয়ান। তার দুপাশে দুটো কালো পাহাড়ের মতো পাহারাদার যেন। নিচে তাকিয়ে দেখে, দু-চারটে হরিণ ছুটেছুটি করে গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ছে। ওদের সামনে আসছে না ভয়ে।

 

যেতে যেতে তিয়ান ভাবে, হাতিটা নিশ্চয়ই তাকে জঙ্গলের বাইরে পৌঁছে দিয়ে আসবে। তার মা নিশ্চয়ই এতক্ষণে তাকে দেখতে না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছেন। সে হাতির পিঠে বসে যেতে যেতে জঙ্গলের অনেকটা দূর পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছিল। শুধু জঙ্গল আরও গভীর জঙ্গল। সেখান থেকে বাইরে বেরোনোর রাস্তা কোনটা জানে না সে। শুধু দূরে দেখতে পায়, অন্ধকারের মধ্যেই আগুনের আলো যেন ছড়িয়ে দিচ্ছে রডোডেনড্রন গাছগুলি। যেতে যেতে আরও দেখতে পায়, একটু দূর থেকে একটা গম্ভীর গন্ডার লক্ষ্য করছে তাকে। এখন আর তেমন ভয় করছে না তিয়ানের। তার দুপাশের পাহারাদার দুলকি চালে হাঁটছে যে সঙ্গে সঙ্গে।

 

কিন্তু একটু পরেই ভয় ভয় করে তার। বাইরে বেরোবার রাস্তা ছেড়ে সে কি আরও গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়ছে না? পিঠের উপর বসে যেতে যেতে বাচ্চা হাতিটার ঘাড়ের কাছে হাত বোলাতে বোলাতে একবার ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল সে, “আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?”

ছোট্ট হাতি কোনো উত্তর না দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে নীরবে। একটা হরিণ তার পায়ের কাছে মুখ এনে  সুড়সুড়ি দিয়ে পালাল। তিয়ান চমকে ওঠে। এবার বেশ জোরেই চিৎকার করে জানতে চাইল, “আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?”

এবারও কোনও উত্তর এল না। তার মা-র জন্য এবার ভিতর থেকে হু হু করে কান্না উঠে আসতে চাইছে। কেন যে সে ছুটির পর মা-র কাছে ফিরে না গিয়ে পার্কে খেলতে ঢুকল। কেনই বা জঙ্গলের ভিতরে ঢুকতে গেল। আর ভালো লাগছে না তার। এরা কেউ থামছেও না। জঙ্গলের আরও গভীরে ঢুকে পড়ছে। তিয়ান এবার সত্যিই কেঁদে ফেলল। চিৎকার করে বলে, “মা, আমি তোমাকে ছেড়ে আর যাব না কোথাও।”

তিয়ানের মা তাকে বিছানা থেকে ঠেলে তুললেন, “কী রে কিসব বলছিস ঘুমের মধ্যে! উঠে পড়, স্কুলের সময় হয়ে গেল।


পাঠকদের মন্তব্য

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up