ছোটোদের চাঁদের হাসি / গল্প শুধু গল্প নয় / সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে মিনার ও মসজিদ

 

দিল্লিতে মোঘল শাসন শুরু হওয়ার সময় থেকেই হুগলির পাণ্ডুয়া অঞ্চল চলে আসে ঐতিহাসিক গুরুত্বে। তবে, এর ইতিহাস আরও পুরোনো। কথিত আছে, ১৩০০ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার মহানাদ অঞ্চলে পাণ্ডু রাজা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার নাম থেকেই এলাকার পাণ্ডুয়া নামকরণ। সেই সময় দিল্লির মসনদে আসীন ফিরোজ শাহ খিলজি। সারা ভারতেই ক্ষমতা বিস্তারে ব্যস্ত তারা। কোনও এক পারিবারিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে পাণ্ডুয়া এলেন ফিরোজ শাহ খিলজি। এখানে তাঁর প্রতিনিধি রূপে ছিলেন আত্মীয় শাহিদ শাহ খিলজি।

 

অনুষ্ঠান শেষে ফিরোজ শাহ ফিরে গেলেন দিল্লি। কিন্তু যাওয়ার আগে ঘটিয়ে গেলেন একটি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ঘটনা, যা সামাজিক ক্ষেত্রে বিপুল সমস্যার সৃষ্টি করেছিল। এই সমস্যা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ালো। পাণ্ডু রাজার সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধল শাহিদ শাহ খিলজির। দিল্লি থেকে জাফর খান গাজীর নেতৃত্বে এক বিরাট সেনাদল এলো শাহিদ শাহ খিলজির শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে। যুদ্ধে জয়ী হলেও শাহিদ শাহ খিলজি মারাত্মক আহত হন ও মারা যান। যেখানে তাঁর মৃত্যু হয়, তার কাছেই সমাধিস্থ করা হয় তাঁকে। একটি দরগাও গড়ে ওঠে এখানে। এছাড়াও শাহিদ শাহ খিলজির পাণ্ডুয়া বিজয় উপলক্ষে একটি মিনার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৩৪০ সালে, যা পান্ডুয়া মিনার বলে খ্যাত। এরই পাশে অবস্থিত বাইশ দরওয়াজা মন্দির বা বড়ি মসজিদ।

 

 

বলা বাহুল্য অঞ্চলটি মুসলিম শাসনের আয়ত্তে আসার পর দরগা, মসজিদ ইত্যাদি গড়ে ওঠে ক্রমে ক্রমে। তারই অঙ্গ এই মিনার ও বড়ি মসজিদ। প্রাচীন মোঘল আমলের গৌরব আজও বহন করছে মিনার ও মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। পাণ্ডুয়ার বড়ি মসজিদ দর্শনে এক ছুটির সকালে একদিনের এক ট্রিপ, যা আমার কাছে আজও না-ভোলা স্মৃতি হয়ে আছে। বেশ মনে পড়ছে, যখন গন্তব্যে পৌঁছলাম, তখন সবে ঘুম ভেঙেছে শহরতলীর। হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে পাণ্ডুয়া স্টেশন। সেখান থেকে কিছুটা রিকশা, কোথাও টোটো–এভাবেই পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। বিশাল এক মাঠের চারপাশে লোকবসতি। এক ধারে নিতান্ত অবহেলায় পড়ে এই ঐতিহাসিক নিদর্শন। শুধু যেন কালের রক্তচক্ষুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে মিনারটি। মিনারের উচ্চতা ৩৮ মিটার। ঘোরানো সিঁড়ি উঠে গিয়েছে সুউচ্চ মিনারের উপরিভাগে। সিঁড়ির সংখ্যা মোট ১৬১। মিনারটি নিচ থেকে ক্রমশ সরু হয়ে গিয়েছে ওপরের দিকে। মিনারের মাথায় রয়েছে গম্বুজ, যা মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন।

 

 

বাইশ দরজা বিশিষ্ট বড়ি মসজিদের দরজা, দেওয়াল কিছুই আজ আর তেমন বোঝার উপায় নেই। দু তিনদিকের দেওয়াল কোনও মতে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দন্ডায়মান কিছু খিলান ও গম্বুজ। কিছুটা নিচু ছাদের লম্বা ও বেশ ছড়ানো এই মসজিদের ধ্বংসাবশেষ দেখে বিস্ময়াভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। অসাধারণ মুসলিম স্থাপত্য ! মসজিদে ব্যবহৃত ইটগুলি বাংলার প্রাচীন স্থাপত্যের উজ্জ্বল নিদর্শন। সেই সময় ঘরবাড়ি, মন্দির, মসজিদ গঠনে এই বিশেষ ধরণের ছোট ছোট আকারের ইট প্রস্তুত করা হতো। অঞ্চলটি এককালে অত্যন্ত সমৃদ্ধ যে ছিল, তার চিন্হ এই মসজিদের শরীরে আজও লেগে।

 

 


পাঠকদের মন্তব্য

নীতীশ বসু লিখেছেন... ০৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪
অনেককিছু জানা গেল , ধন্যবাদ জানাই ।

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up