উটপাখির গলা লম্বা হলো কি করে!
শিকুল ভট্টাচার্য
(আফ্রিকার লোককথা)
অনেক, অনেকদিন আগের কথা। এক মস্তবড়ো নদীর ধারে ছিল গভীর এক অরণ্য। নদীতে বাস করত হাঙর, কুমির, কামোট প্রভৃতি ভয়ংকর সব জলচর জন্তু। আর বনে বাস করত অনেক পশু আর পাখি। সবাই মিলেমিশে সুখে ছিল।
কুমিররা মাঝে মাঝেই জীবজন্তু শিকার করার জন্য ভাঙায় উঠে আসত। আর ধরতে পারলে তীব্রগতিতে তাকে জলে টেনে নিয়ে যেত। তারপর হত মহাভোজ।
মাঝে মাঝে কুমিররা ডাঙায় উঠে রোদ পোহাত। পশুপাখিরাও খাবার খুঁজতে নদীর ধারে চলে আসত। এইভাবেই কি করে যেন এক উটপাখির সঙ্গে খুব ভাব হয়ে গেল এক কুমিরের। একেবারে গলায়-গলায় বন্ধুত্ব। কুমিরকে রোদ পোহাতে দেখলেই উটপাখি লাফাতে লাফাতে চলে আসে তার কাছে। কত গল্প হয় দু'জনে।
উটপাখি সরল মনে কুমিরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে। তার মনে কোনো পাপ নেই। কুমিরের মনে কিন্তু এক কুটিল চিন্তা সর্বদা কাজ করত। সে ভাবত কখন উটপাখির হৃষ্টপুষ্ট নধর শরীরটি সে চিবিয়ে খাবে। কুমির চোখ বুজে সে-কথা ভাবে আর আনন্দে তার মন ভরে যায়।
এক দুপুরে কুমির নদীর পাড়ে রোদ পোহাচ্ছিল। উটপাখি তাকে দেখে লম্বা পায়ে লাফাতে লাফাতে কাছে এলো। উটপাখির দেখা পেতেই কুমির মুখে যন্ত্রণার ভাব ফুটিয়ে তুলল। তার চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা জলও গড়িয়ে পড়ল। তা দেখে উটপাখি সহানুভূতি জানিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করল–কি হয়েছে তার! কিসে কষ্ট পাচ্ছে তার বন্ধু ? কুমির গলায় যন্ত্রণা দেখিয়ে জানাল, তার দাঁতে ব্যথা হচ্ছে। আরো বলল, তার তো অনেকগুলি দাঁত! ঠিক কোনটিতে ব্যথা হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না। উটপাখি যদি একটু দেখে দেয়, কোন দাঁতটি যন্ত্রণা দিচ্ছে, তাহলে ভালো হয়। এই বলে সে মস্তবড় হাঁ করে তার মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে উটপাখিকে নষ্ট দাঁতটি দেখে দিতে বলল। উটপাখি সরল মনে কুমিরের হাঁ-এর মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে নষ্ট দাঁত খুঁজতে লাগল। আর যেই না উটপাখি অনেকটা গলা ঢুকিয়েছে কুমির মুখ বন্ধ করে গলা টিপে তাকে হিড়-হিড় করে জলের দিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
এতক্ষণে বোকা উটপাখি কুমিরের মতলবখানা বুঝতে পারল। তখন উটপাখির গলা লম্বা ছিল না। অন্যান্য সাধারণ পাখির মতোই ছিল। বেচারি উটপাখির মাথা কুমিরের মুখের মধ্যে বন্ধ হতে তার দম বেরিয়ে যাবার অবস্থা। গলা কামড়ে আছে কুমির–যন্ত্রণায় প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। তার উপর কুমির তাকে টেনে নদীর দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। তবে উটপাখিও বড়ো পাখি, তারও গায়ের জোর কম নয়। তার পাদুটি যেমন লম্বা তেমনি শক্তিশালী।
এরপর শুরু হলো জোর টানাটানি। কুমির একবার তাকে টেনে প্রায় জলের কিনারায় নিয়ে যাচ্ছে,পরক্ষণেই উটপাখি কুমিরকে টেনে আনছে ডাঙায়। বনের অন্যসব পশুপাখিরা অবাক হয়ে দেখছে কুমির আর উটপাখির টানাটানি। জলচর প্রাণীরাও দেখছে। অনেকক্ষণ ধরে চলল প্রচন্ড সে যুদ্ধ।
অবশেষে যুদ্ধ শেষ হল। কুমির হার মেনে উটপাখির মাথা মুখ থেকে বার করে জোর পায়ে সর-সর করে জলের দিকে চলে গেল। আর উটপাখি কুমিরের খপ্পর থেকে মুক্ত হয়ে জোর পায়ে বনের দিকে ছুটল। কিন্তু এই টানাটানিতে উটপাখির গলা লম্বা হয়ে গেল–অনেকটা লম্বা। সেই থেকে আজও উটপাখি লম্বা গলা নিয়ে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায়।
পাঠকদের মন্তব্য
250