ছোটোদের চাঁদের হাসি / দেশ-বিদেশের গপ্পো / ডিসেম্বর ২০২৩

তেলহৈবার লড়াই (মনিপুরী)

এক দেশে এক ছেলে ছিল। নাম তার তেলহৈবা। লোকে ভাবত, সে দারুণ তীর চালাতে পারে বলেই এমন নাম।

আসল ঘটনা কিন্তু তা নয়। তীর ছোঁড়া তো দূর, আজ পর্যন্ত সে তীর-ধনুক ছুঁয়েও দেখেনি৷ শৈশবে নিজের ছোট ছোট দুটি হাত দিয়ে সব সময়ই কিছু না কিছু করত। তাই তার মা এমন নাম রেখেছেন৷ তখন থেকে সবাই তাকে এ নামেই ডাকে৷

 

প্রতিবেশী এক রাজ্যের রাজা একবার তেলহৈবাদের রাজ্য আক্রমণ করে৷ কিন্তু শত্রুদের তীরের সামনে তেলহৈবার রাজ্যের সৈন্যসামন্তরা বেশিক্ষণ টিঁকতে পারেনি।

'আমার রাজ্যে সুদক্ষ কোন তীরন্দাজ আছে?' মন্ত্রীদের কাছে রাজা জানতে চান৷

'মহারাজ! আমাদের গাঁয়ে তেলহৈবা নামে এক যুবক থাকে ৷' একজন উত্তর দেয়, 'তার মতো তীর কেউ ছুঁড়তে পারে না৷'

রাজা হুকুম দেন, 'এক্ষুনি তাকে ডেকে পাঠাও৷'

প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সবাই ছোটে৷ গ্রাম থেকে তেলহৈবাকে টানতে টানতে রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসে৷

'তেলহৈবা!' রাজা বলেন৷

'আজ্ঞে ,মহারাজ! '

'কাল তোমাকে যুদ্ধে যেতে হবে৷ '

'কিন্তু মহারাজ ,আমি তো…৷,

'কোনও কথা শুনতে চাই না৷ আমার হুকুম। শত্রুপক্ষ তীর চালানোয় খুবই চৌকস৷ তোমাকে তাদের হারাতে হবে।'

এদিকে শত্রুশিবিরেও কথাটা রটে যায়,পরদিন এক যুবক তীরন্দাজ যুদ্ধ করতে আসবে৷

অন্যদিকে রাজার আদেশ শুনে ভয়,দুশ্চিন্তা ও দুঃখে কাতর তেলহৈবা বাড়ি ফিরে সব কথা মাকে খুলে বলে৷

'এত মন খারাপ করিস কেন বাবা? মা ভরসা দেন, 'আমি আছি কি করতে? যা,তুই গিয়ে এখন বেশ পোক্ত দেখে একটা ধনুক বানিয়ে আন দেখি, তারপর আমি সব সামলে নেব।'

 

বাঁশ কেটে, তেলহৈবা চমৎকার একটা ধনুক বানায়৷ ছেলের কারিকুরি দেখে মা খুব খুশি৷

সকাল হয়৷ তেলহৈবা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত৷

আগের দিন বানানো ধনুকটা সে কাঁধে ঝুলিয়ে নেয়৷ বেরোনোর সময় তার মা বাঁশের নলের তৈরি সাত-আটটা তূণীর এনে দেন৷ খুব শক্ত করে সেগুলোর ছিপি আটকানো৷ মা বলেন, 'বাবা, তোকে যে তূণীরগুলো দিলাম, বেশ ভালো করে সেগুলির মুখ এঁটে দিয়েছিI শত্রুদের সামনে গিয়েই সব ক'টার ছিপি খুলে দিবি।'

মাকে প্রণাম করে তেলহৈবা রওনা হয়৷

ধনুক আর খালি তূণীর নিয়ে তেলহৈবাকে আসতে দেখে কয়েকজন সৈনিক ফিসফিস করে, আরে তেলহৈবার তূণীর তো ফাঁকা রে৷'

'চুপ! আমাদের তেলহৈবা মন্ত্র জানে৷' এক সৈনিক বলে, 'ওর মন্ত্রের গুণেই তূণীরটা ফাঁকা দেখাচ্ছে৷'

 

তেলহৈবা যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত৷

'জ্যান্ত ধর ,জ্যান্ত!' চিৎকার করতে করতে শক্রপক্ষের ফৌজ তেলহৈবাকে ধরতে ছোটে,'ওই বাহাদুর যুবক তীরন্দাজকে জীবিত ধর৷'

শত্রুরা চারপাশে ঘিরে ফেললে, মায়ের পরামর্শ মতো, তেলহৈবা একের পর এক তুণীরের ছিপি খুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো থেকে তাদের বাগানের মৌমাছিরা ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে গিয়ে শত্রুদের ভয়ঙ্করভাবে হুল ফোটাতে থাকে৷ আতঙ্কে, ব্যথায় হতবুদ্ধি হয়ে কী করবে বুঝতে না পেরে, তারা শেষে পালাতে শুরু করে৷ সুযোগ বুঝে তেলহৈবাদের রাজা বিপক্ষের সমস্ত সৈনিককে বন্দী করে ফেলেন৷

যুদ্ধে জিতে খুশি হয়ে রাজামশাই তেলহৈবাকে প্রচুর পুরস্কার দেন৷ তাই দিয়ে সে আনন্দে জীবন কাটাতে থাকে৷


পাঠকদের মন্তব্য

স্বপ্না দত্ত লিখেছেন... ০৯ই ডিসেম্বর, ২০২৩
বেশ লাগল গল্পটি।এদেশের এক প্রদেশ, মণিপুর।আমি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। মণিপুরী ভাষা বুঝিনা।তবে তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় আছে বৈকি।এমন অনুবাদ চলতে থাকুক। "চাঁদের হাসি" উছলে পড়ুক পাঠক কুলে।
Hemanta Sarkhel লিখেছেন... ০৯ই ডিসেম্বর, ২০২৩
বাঃ, কী সুন্দর!

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up