ছোটোদের চাঁদের হাসি / দেশ-বিদেশের গপ্পো / আগষ্ট ২০২৫

সত্যিকথার খেসারত

(কেরালার লোককথা)

 

জনের বাবা-মা মারা গেছে খুব ছোটবেলায়। আপনজন বলতে কেউ নেই। লোকের বাড়ি কাজ করে। খাবার পায়। থাকতেও পারে সেই বাড়িতে। কাজে সে খুব ওস্তাদ । খুঁত নেই। কখনো-কখনো কোনো উদার মালিক তাকে কিছু পয়সাও দেন।    

     ওর একটাই অসুবিধে। খুব দরদ দিয়ে, নিখুঁত করে কাজ করে। কিন্তু কোথাও টিকতে পারে না বেশি দিন। সে এ যুগের হালচাল ঠিক ধরতে পারে না। মুখ ফুটে অপ্রিয় সত্যিকথা স্পষ্ট করে বলে দেয় জন।

     এভাবেই সত্যিকথা মনিবের মুখের ওপর বলে এক বছরে চারটে বাড়িতে কাজ চলে গেল জনের। পেটের জ্বালা বড়ো জ্বালা। সে হন্যে হয়ে কাজ খুঁজছে খাওয়া ও থাকার বিনিময়ে, পাচ্ছে না।

    

একদিন হঠাৎ একটা খুব বড়ো বাড়ি দেখল সে। বাড়িটির সামনে এসে দাঁড়াল। দেখল এলাহি ব্যাপার। কত লোক, দারোয়ান, বাগান-করার লোক।

একটা কাজের মেয়ে বিশাল গেট দিয়ে বের হচ্ছিল। তাকে জন বলল, এ বাড়িতে একটা কাজ পাবো? পেট চোঁ চোঁ করছে। না খেয়ে মারা যাবো।

    মেয়েটি দয়াবতী। বলল, মনিব মস্ত ধনী। তাঁর ছেলের শীঘ্র বিয়ে। দু-চারজন চাকর দরকার।

মেয়েটা মনিব গিন্নিকে বলল, ছেলেটাকে নিন কর্তামা। বড়ো দুঃখী। না খেয়ে মারা যাবে।

       মনিবগিন্নির ভালো লাগল চটপটে ছোটো ছেলে দেখে। জন কাজ পেল।

       মনিবগিন্নি বললেন তোমার আগের মনিব তোমাকে ছাঁটাই করল কেন?

“মনিব খুব ভাল। তাঁর গিন্নি আমাকে দুচোখে দেখতে পারতেন না। কারণ আমি স্পষ্ট করে সত্যিকথা বলি”–জানায় জন।

বর্তমান মনিবগিন্নি খুব খুশি। তিনি বললেন, খুব ভালো, সত্যিকথা বলা কাজের লোক খুব কম জোটে। তোমার মত সত্যবাদী ছেলেকে পেয়ে বেশ ভালো লাগছে আমার।

 

     নানা কাজ করে জন। বেশ দিন যাচ্ছে। খেতে পাচ্ছে, ভাল ঘরে থাকতেও পারছে। বেশ সুখেই কাজ করছে। সে কাজ করে যত্ন করে। খায়, দায়,আরামে ঘুমায়।

     একদিন ঘটল এক অঘটন। প্রতিদিনের মতো কর্তার পিছুপিছু ব্যাগ নিয়ে গেছে বাজারে।

ব্যাগ-ঠাসা অনেক কিছু এনেছে। খুব খিদে পেয়েছে তার।

     বাজারের ব্যাগটাও বেশ ভারী। ঘেমে-টেমে ব্যাগটা বাড়িতে নামিয়েই সে বলল, “মা ঠাকুরুন, খুব খিদে পেয়েছে। তাড়াতাড়ি কিছু খেতে দাও।”

      মনিবগিন্নি খুব ব্যস্ত। সামনে ছেলের বিয়ে বলে কথা! তার কাতর গলায় খাবার চাওয়ার কথাটা মনিবগিন্নির কানে যায়নি।

        জন রেগে কাই। সে মনিবগিন্নিকে বলল, “ট্যারা-চোখী ঠাকুরুন। আমাকে খেতে দাও। খিদেয় যে মরে গেলাম। একথা মনিবগিন্নি স্পষ্ট শুনলেন। রেগে মনিবগিন্নি দুর্বাসা। বলেন, “কী বললি?”

জন আবার বলল, “ট্যারাচোখী ঠাকুরুন।”

রাগে মনিবগিন্নি জ্বলছেন। চেঁচিয়ে বললেন, “এত সাহস, এত বুকের পাটা তোর?  আমাকে যা খুশি বলিস?”

   জন বলল, “আমি তো মিথ্যে বলি না। আপনি কি সত্যি-সত্যিই ট্যারা নন?”

   তিনি ট্যারা ঠিকই। তবে বাড়ির পুচকে চাকর তাঁকে সামনাসামনি তা বলবে, তা কি হয়?    

         তিনি খেঁকিয়ে বলেন, “হতচ্ছাড়া, শয়তান পাজি। এক্ষুনি ভাগ আমার বাড়ি থেকে। হাতে একটা মোটা লাঠি নিয়ে মনিবগিন্নির সে কী তাড়া! জন বেচারাও টেনে ছুট দিল সত্যিকথার খেসারত দিতে…!


পাঠকদের মন্তব্য

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up