ছোটোদের চাঁদের হাসি / ছড়া - কবিতা / সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছড়া-কবিতা

 

শ্রদ্ধাঞ্জলি

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

জন্মদিন : ৭ই সেপ্টেম্বর

 

হারিয়ে গেছি

ছন্দা চট্টোপাধ্যায়

 

তোমরা যখন গভীর ঘুমে

কিংবা পুজোর প্যান্ডেলে

আমি তখন হারিয়ে গেছি

দূর নীলিমায় সব ফেলে।

 

তোমার মত ছোট্ট যখন

ভেবেছিলাম সব আমার

আকাশ নদী পাহাড় সাগর

পাখ-পাখালির সুরবাহার!

 

তোমার কাছে রেখে গেলাম

স্বপ্ন-দেখা মনটাকে

ইচ্ছে হলে খুঁজে নিয়ো

লেখাপড়ার এক ফাঁকে।

 

মনটা রেখো তরতাজা

একটু আগুন এককোণে

ভাবনাগুলো ছড়াবে রং

দুয়ার থেকে অঙ্গনে!

 

 

জলের চিঠি

কাজী মুরশিদুল আরেফিন

 

ঝমঝমানো বৃষ্টি তুমুল

দৃষ্টি কালো মেঘে,

পুবের বাতাস থামছে না যে

ছুটছে ঝড়ের বেগে।

 

মেঘের দূতের নৌকো চেপে

জলের চিঠি আসে,

পুকুর ডোবা কানায় কানায়

সাগর নদী ভাসে।

 

গাছপালা সব দুলছে ঝড়ে

ডুবছে পাহাড় গলি,

বন্দি ঘরে এখন রিমি

নাচছে কথাকলি।

 

বারান্দাতে ছিটকে পড়ে

বরফ কুচি কুচি,

রান্নাঘরে খিচুড়ি আর

গরম গরম লুচি।

 

আকাশ থেকে এমন ক’রে

জলটা ঢালে কে যে,

কৃষ্ণচূড়া গাছের ডালে

কাকটা বসে ভেজে।

 

বর্ষা এলেই বানভাসিদের

চোখের জলের ধারা,

আকাশ কাঁদে দিনরাত্তির

বৃষ্টি পাগলপারা।

 

 

বৃষ্টি আসুক

অচিন্ত্য সুরাল

 

বৃষ্টি যত পড়বে তার

সিংহভাগ সাগর নেবে

ক্ষেত খামারও প্রচুর পাবে

তার কিছুটা বিলিয়ে দেবে।

 

শুকনো মাটি কতক শুষে

তৃপ্ত হবে মেঘের দানে

খানিক আরও বাষ্প হয়ে

ফিরবে আবার আকাশপানে।

 

বনবনানী যেটুকু পাবে

আগল দিয়ে রাখবে তাকে

সারা বছর বিন্দু হয়ে

ভাল জোগাবে নদ-নালাকে।

 

তাই বলি কী বৃষ্টি আসুক

বৃষ্টি ঝরুক পাগল পারা

খাল-বিল সব উথলে উঠুক

কীটপতঙ্গ আত্মহারা!

 

ছুটির ঘন্টাও উঠলে বেজে

স্কুলের ছেলে-মেয়ের দল

নামিয়ে দিক বৃষ্টিধারার

সমান্তরাল প্রাণের ঢল!

 

বৃষ্টি যাদের ভাল্লাগেনা

বৃষ্টি হলেই ক্ষুব্ধ মন

তাদের মুখে মানায় নাকি

“বন্ধ করো উষ্ণায়ন !!”

 

 

বিষ্টি-কুটুম

স্বপনকুমার রায়

 

বিষ্টি-কুটুম ইষ্টি ছিলে

তোমায় দিলাম আড়ি

কুটুমবাড়ি এসেই তুমি

করছো বাড়াবাড়ি।

 

পুকুর ডোবা খাল ভরেছ

নৌকা বাঁধা ঘাটে

চারিদিকে সব সাগর যেন

ঢেউ খেলছে মাঠে।

 

নেই সে খেলার মাঠটা জেগে

ঘাসফড়িং-এর বাসা

ঘরে বসেই দিন কাটানো

বন্দি সকল আশা।

 

বিষ্টি-কুটুম যাও ফিরে যাও

চাই না এমন বৃষ্টি

তাকিয়ে দেখো তোমার জন্যে

বন্ধ সকল সৃষ্টি।

 

 

মেঘের রূপ বদলায়

জগদীশ মন্ডল

 

আকাশের গায়ে ভেসে বেড়ায়

ধূসর মেঘের তরী,

আস্তে আস্তে পাল্টে গেল

রূপটা ভয়ংকরী।

 

টুপ টুপাটুপ ঝাপুর ঝুপুর

বৃষ্টি পড়া শুরু,

বিজলী আলো ঝলসে ওঠে

মেঘের গুরু গুরু।

 

ঝিরিঝিরি, ইলশেগুঁড়ি

আবার মুষলধারে,

কোলাব্যাঙের ঘ্যানঘ্যানানি

নালায় পুকুর পাড়ে।

 

কদম কেয়া কামিনী জুঁই

সুবাস ছড়ায় গন্ধে,

সবুজ পাড়া জেগে ওঠে

নাচতে থাকে ছন্দে।

 

মেঘের কোলে রোদের উড়ান

মুখ দেখালো রবি,

তুলি হাতে আঁকছে খুকু

সৃষ্টিসুখের ছবি।

 

 

পুজোর খবর

শীতল চট্টোপাধ্যায়

 

বর্ষা গেছে বাড়ি ফিরে

নীল ফিরেছে নিজের ঘরে,

এদিক-ওদিক টুং টাংয়েতে

যেন পুজোর খবর ঝরে।

 

খুঁজতে গেলে কিছুই তো নেই

শিশির শুধু এসছে ঘাসে,

পথকে বলি কোন দিকে গো

পুজোর খবর হাওয়ায় ভাসে?

 

কবে বাবার মাইনে হবে

নিয়ে যাবে কিনতে পোশাক,

তাড়াতাড়ি দিন পেরিয়ে

পুজোর গন্ধ সক্কলে পাক।

 

সবার আগে কাশ ফুলেরা

সেজে গেছে পুজোর সাজে,

ওরা বলল-পুজোর খবর

এসে গেছে ফুলের মাঝে।

 

 

শরৎ আসে

শঙ্খশুভ্র পাত্র

 

শরৎ আসে শিউলিবাসে

শিশির-ধোওয়া কাশফুলে,

সেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে

দীঘির বুকে, হাঁসকুলে।

 

শরৎ আসে রৌদ্র হাসে

হিম-কুয়াশার ফাঁস খুলে,

এমন ছবি, দু’চোখে তুই

দেখতে কেন যাস ভুলে?

 

শরৎ আসে নীল আকাশে

সাদা মেঘের মাস্তুলে,

তাই তো খুশির হাওয়া খেলে

ছোট্ট নদীর বাঁশ- পুলে।

 

শরৎ আসে ভাদ্র মাসে

আশ্বিনে তার রাশ তুলে,

দুগ্গাপুজোয় জমবে তো নাচ

ধূপ-ধুনুচির আঁচ ছুঁলে।


পাঠকদের মন্তব্য

মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথ লিখেছেন... ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫
প্রিয় সাহিত্যিক সুনীল-স্মরণ দিয়ে শুরু, শরৎ-এর অঞ্জলিতে সমাপন। প্রতিটি ছড়া-ই মনকাড়া।
পার্থপ্রতিম আচার্য লিখেছেন... ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫
চিত্তাকর্ষক আয়োজন
রাজর্ষি মন্ডল লিখেছেন... ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫
ছড়াগুলো ভারি ভালো লাগল। মন ভালো হয়ে গেল। সব গুণীজনদের আন্তরিক অভিনন্দন।
তুহিন কুমার চন্দ লিখেছেন... ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫
অসম্ভব ভালো লেখগুলো।তৃপ্ত হলাম।
অষ্টপদ মালিক লিখেছেন... ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫
প্রত্যেকটি ছড়া কিন্তু খুব সুন্দর হয়েছে। যেহেতু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণ সংখ্যা সেহেতু ছড়ায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় অপ্রাসঙ্গিক রয়ে গেলেন বলে আমি মনে করি ।এ বিষয়ে সবিনয়ে সম্পাদিকা দিদির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ।
উত্তরে Admin লিখেছেন... ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫
প্রথম ছড়াটিই তো তাঁর স্মরণে রাখা হয়েছে।
তনুজা চক্রবর্তী লিখেছেন... ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫
সবকটি ছড়া কবিতাই ভারি চমৎকার! খুব ভালোলাগল পড়ে।
উৎপলকুমার ধারা লিখেছেন... ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫
শরতের ছড়া হয়ে গেল পড়া সুন্দর গড়া বড়ো মনোহরা.....

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up