ছড়া-কবিতা
ভাগ্যিস
ভবেশ দাশ
ভাগ্যিস, তবু ফুটপাতটুকু ছিল
নইলে কোথায় শুতাম
রাতের বেলা?
নইলে এমন খোলা আকাশের নিচে
কোথায় পেতাম খোলামেলা পাঠশালা?
রোজ বই-স্লেট
নিয়ে কিছু লিখিপড়ি
কিছু আঁকিবুকি কাটি,
তারপরে ফের চায়ের দোকানে
গতরে খেটেও, খাই কিল-চড় চাটি।
তবু আমাদের
পাঠশালাটুকু আছে
তাও ভাগ্যিস ছিল
এই ফুটপাত।
আমরাও তাই লিখে পড়ে কিছু শিখি
জানি আমাদেরও আছেন রবীন্দ্রনাথ।
কে কে জানো, কী জানো
কী জানো !
উৎপল ঝা
তোমরা কি জানো সেবারে
‘কে কে’-র গানের আসরে
আর কে কে ছিল ?
তোমরা কি জানো
পথ নয় মসৃণ সাজানো-গুছানো,
মেঝেতে মাদুর ছিল
নেহাৎ গুটানো!
তোমরা কি জানো
কাকের বাসায় এক
কোকিলের ডিম ছিল
লুকানো!
কিছুই নতুন নয় সবই পুরানো,
ছড়ার আদলে তবু
তাদেরই সাজানো !
যদি জানা যায়, কে কে জানো,
কী কী জানো !
কিসের জন্য কী
আশিসকুমার মুখোপাধ্যায়
আজকে বরং বলছি শোনো
কিসের জন্য কী
মাছের জন্য সরষের তেল
লুচির জন্য ঘি।
মেঘের জন্য বৃষ্টি এবং
রোদের জন্য তাপ
জলের জন্য গেলাস, কিন্তু
চায়ের জন্য কাপ।
পড়ার জন্য বই আমাদের
ছড়ার জন্য মিল
কানের জন্য কানমলা,আর
পিঠের জন্য কিল।
মাথার জন্য টিকলি, তবে
নাকের জন্য নথ
হাঁটার জন্য পা রয়েছে
চলার জন্য পথ।
রাতের জন্য ঘন আঁধার
ভূতের জন্য ভয়
দ্বিধার জন্য পিছিয়ে পড়া
জেদের জন্য জয়।
সুরের জন্য বাঁশিই আছে
গানের জন্য রাগ
সবার জন্য 'বাংলা' ছিল
ভুলের জন্য ভাগ।
ছুটির ওই নীলখামটা
গৌতম হাজরা
শিউলির গন্ধে মাতাল বাতাসের স্নিগ্ধ হাসি,
পুজোর ওই বাজনা বাজে শরতের শুনছি বাঁশি।
আলোর ওই চিকনচিকে পালকের আকাশখানা,
ছোট এক উছল নদী কোথা যায়? কোন ঠিকানা?
ডাকছে আমায় নাকি? দেখছি রঙের খেলা,
এলো রে অচিন পাখি কাটিয়ে সারাবেলা।
ইশারায় বলছো কিছু? আজকে নেইকো মানা,
স্বপ্নের ধিনতা ধিতান যেথা মন চায় তো যা না।
কাশের ওই সাদা চুলে সোনারোদ ঝলমলালো,
ছুটির ওই নীলখামটা ডাকেতে কে পাঠালো?
ঠিকানার খোঁজ করতেই বাউলের আগমনী,
খাতা বই বন্ধ এখন ট্রেনের ওই শব্দ শুনি।
আঁকো ফুলের ছড়া
প্রদীপ আচার্য
পাতার ফাঁকে কুমড়োফুল
চিনতে যেন না হয় ভুল
হলুদ ফুল সবুজ পাতায়
ফুটিয়ে তোল আঁকার খাতায়।
দিঘির জলে শাপলাফুল
পদ্ম ভেবে করিস ভুল
জলফড়িংই বন্ধু তার
আঁকলে পাবি পুরস্কার।
বনের মধ্যে জংলিফুল
খুঁজলে মালী করবি ভুল
ফুলে লাগে হাওয়ার দোল
রং-তুলিতে ফুটিয়ে তোল।
খুঁজিস যদি ডুমুরফুল
করবি তবে মস্ত ভুল
এ ফুল দেখা যায় না বলেই
বলি, কিছু উধাও হলেই।
খুশি
রবিনকুমার দাস
যা খুশি তাই লিখলে কি আর
সব হয়ে যায় কবিতা,
বিড়াল এঁকে বাঘ লিখলে
বদলাবে কী ছবিটা?
চিনি ছাড়া পায়েস কী আর
হয়গো দাদা মিষ্টি
খাতার পাতায় মেঘ আঁকলে
নামবে তাতে বৃষ্টি!
দুধের স্বাদ কী ঘোলে মেটে
চিনি ছাড়া চায়ে,
নূপুর ছাড়া নাচ মানায় না
তাল আসে না পায়ে।
ছন্দ ছাড়া গান হয়না
সুর হয়যে জব্দ,
ছড়ায় ছড়ায় ছড়িয়ে থাকে
হাজার গানের শব্দ।
‘চাঁদের হাসি’ মুখে নিয়ে
আজ ছোটদের বাঁচা,
তাইতো ছড়া মনে রাখে
বুড়ো কচিকাঁচা।
পাঠকদের মন্তব্য
250