ছোটোদের চাঁদের হাসি / ছড়া - কবিতা / মে ২০২৪

ছড়া-কবিতা

একটা

শংকর চক্রবর্তী

 

একটা মানুষ গন্ধ শোঁকে ফুলের ,

একটা মানুষ পাতার |

গন্ধটা ঠিক অন্যরকম ,

বৃষ্টি-মাখা ছাতার |

 

একটা বাঘের ঘুম পেল তো ,

একটা হরিণ ছোটে |

স্বপ্ন তখন লাফিয়ে ওঠে ,

বেদম খিদের চোটে |

 

একটা ফড়িং ফুলে ঘুমোয় ,

একটা ফুলের ছড়া |

হাজার ফুলের ঝাড়বাতিটা ,

আলোয় আলোয় ভরা |

 

একটা খাতায় রঙিন লেখা ,

একটা ছবি আঁকে |

ফুলগুলি সব মুচকি হাসে ,

চিকন পাতার ফাঁকে |

 

 

রূপকথা

হাননান আহসান

 

তেপান্তরের মাঠটি কোথায়

খুব খুঁজেছি দেশান্তরে

কেউ বলেনি খবর কোনো

ডিগবাজি খাই একলা ঘরে।

 

পাইনি দেখা রুপোরকাঠি

সোনারকাঠি জাদুর খেলা

কী মোহময় দিন কেটেছে

চুম্বকীয় কিশোরবেলা।

 

জলপরি আর মেঘের পরি

রহস্যময় সবার কাছে

পক্ষীরাজের ঘোড়া কেমন

ঘোর কুয়াশায় উড়কি নাচে৷

 

হাট্টিমাটিম কোন প্রাণী রে

ডিম পেড়ে যায় মাঠেঘাটে

সেই অজানার হদিশ পেতে

সূর্য কখন গেছে পাটে৷

 

 

খুশির রঙে

গৌতম হাজরা

 

আমি যদি আঁকি ছোট্ট একটা বাড়ি

তবে সেথা চাই ছাওয়া ভরা গাছপালা

পাখিরা সেখানে কিচিরমিচির করে

উড়ে উড়ে এসে ভরে দেবে ডালপালা।

 

এই যে আমার স্বপ্ন মাখানো বাড়ি

ঠিক তার পাশে থাকবে একটা নদী

তার পাশে মাঠ সবুজ গালিচা মোড়া

মজা হবে খুব খেলাধুলা করি যদি।

 

নদীর ওপারে থাকবে ফুলের বাগান

আহা কি দারুণ লাগবে ভীষণ ভালো

দিনের বেলায় মিঠেকড়া রোদভাসি

রাতের বেলা সাদা জ্যোৎস্নার আলো।

 

হরেক রঙে চারিদিক হবে তোলপাড়

ঠান্ডা বাতাসে জুড়িয়ে যাবে যে মন

আমার বাড়িটা পেরিয়ে ছোট্ট সাঁকো

খুশির রঙেই ভরে যাক সারাক্ষণ।

 

 

দুপুর

পার্থপ্রতিম আচার্য

 

রোদ গড়ানো দুপুর বেলায়

চিলের ছানা একলা ঘরে ---

তাকিয়ে দেখে নিমের হাওয়ায়

শিমুল গাছের ফলক নড়ে ।

 

পাঁচটি টিয়া গাইছে খেয়াল

শালিখ পাখি খুঁটছে দানা,

কাঠঠোকরার ঠকাস ঠকাস...

শব্দ ভেসে আসছে টানা ।

 

বনবেড়ালের মন ছুটে যায়

অচিন দেশের নীল-নীলিমায়,

গাছের ছায়ায় মগ্ন রাখাল

আপনমনে মুরশিদা গায়৷

 

মস্ত টুপির অল্প আড়াল

কে হেঁটে যায় ব্যস্ত পায়ে? 

একখানি পথ যাচ্ছে শহর

অন্যটি যায় মাটির গাঁয়ে।

 

পোটলা খুলে চিলের ছানা

চোখ মেলে বেশ তাকিয়ে দেখে --

মা-রেখেছেন শুকনো রুটি

খুব করে জল-কাদায় মেখে।

 

দুপুর মানেই এতল-বেতল

ভাবনা ছোটে চাকার মতন,

একটি ছেলে কুড়িয়ে পেল --

এই দুপুরেও স্বপ্ন-রতন।

 

বাক্স বোঝাই স্বপ্ন-রতন

চিন্তা বোঝাই একশো আনা,

রোদ মিশে যায় শিমুল পাতায়

ডিগবাজি খায় চিলের ছানা ।

 

 

গাঁয়ের ভাষা, মায়ের ভাষা

শংকর দেবনাথ

 

পাখির গানের ছন্দ মাখা এই ছড়াটা শিশু,

তোমরা বড়ো- বলতে পারো নেই ভেতরে কিছু।

প্রাণ-ফসলের স্বপ্ন আঁকা এই ছড়াটা চাষা,

তোমরা বাবু- বলতে পারো নয় ভাল এর ভাষা।

 

গাছের ছায়ার শান্তি ঢাকা এই ছড়াটা বুনো,

সভ্য মানুষ-বলতে পারো নেই এতে স্বাদ-গুণও।

নবান্ন সুখ-তৃপ্তি ভরা এই ছড়াটা বোকা,

তোমরা চতুর দিতেই পারো ইচ্ছে হলে ধোকা।

 

গাঁয়ের মেঠো-গন্ধ মাখা এই ছড়াটা গেঁয়ো,

শহরবাসী- তোমরা একে করতে পারো হেয়।

তোমরা যতই জানাও মত ওই বিদ্রুপেতে ভরা,

গাঁয়ের ভাষায় মায়ের ভাষায় লিখব তবু ছড়া।

 

 

প্রকৃতির ডাক

কণিকা দাস

 

মিষ্টি মধুর নানান সুরে ডাকছে বনের পাখি

মন ছুটে যায় সাগর পানে,তৃষার্ত দুই আঁখি ।

পাহাড় ডাকে মাখবি তো আয় মেঘের কণা গায়

ঝর্ণা বলে গান শোনাবো আয় রে ছুটে আয়।

 

নদী বলে চলরে চল ওই নৌকা চড়ে দূরে

স্রোতের টানে যাবি ভেসে মাঝির গানের সুরে।

মেঘ তখনই গর্জে বলে, একটুখানি দাঁড়া

আসছি নেমে ঝমঝমিয়ে নিয়ে বারিধারা।

 

গাছগুলো সব উচ্ছ্বসিত ওদের কথা শুনে

এবার তারা সতেজ হবে, আনন্দে দিন গোনে।

আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ডাকছে আয়রে আয়

দিগন্তের ওই পারে যাবি? সময় বয়ে যায়।

 


পাঠকদের মন্তব্য

পীযূষ কান্তি সরকার লিখেছেন... ১৪ই মে, ২০২৪
ছড়াগুলো দুর্দান্ত। ফিরিয়ে দেয় ছেলেবেলা।
শঙ্খশুভ্র পাত্র লিখেছেন... ০১লা জুন, ২০২৪
ছোটোদের চাঁদের হাসি, মে ২০১৪ সংখ্যা অনবদ্য ছড়া-কবিতায় ভরপুর৷ পড়ে খুশি হলাম৷

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up