ছড়া-কবিতা
ওরা বুঝি পথভোলা
দীপিকা রায়
শিমূল পলাশ ফুটলেই কেন
বাউলের গান ভাসে,
রঙে রঙে কেন ভেসে যায় সব
অশান্ত উল্লাসে৷
পথ মিশে যায় দূরে দূরে কেন
রবি ঠাকুরের গানে,
বুঝতে পারিনা বলে দাও তবে
বল কার সন্ধানে৷
কৃষ্ণচূড়ারা পথের দু পাশে
রঙে রঙে সৌরভে,
শুষ্ক শাখায় আগুন ছড়ানো
অমলিন গৌরবে৷
মাথা নেড়ে বলে অশোক, রঙ্গন
বসন্তে আছি মিশে৷
সর্ষেফুলের এত রঙ রূপ,
কার থেকে কম কিসে!
দিগন্ত জোড়া আনন্দ আঁকা
কবিতার পাতা খোলা।
রঙের প্লাবনে ঝরা পাতা ওড়ে
ওরা বুঝি পথভোলা৷
ঝড়-বাদল
শ্যামাচরণ কর্মকার
আকাশ ছিল ঝকঝকে নীল সকাল ছিল মিষ্টি
ঝুরঝুরে রোদ ঝরছিল বেশ হঠাৎ অনাসৃষ্টি৷
সকাল মুছে নামল আঁধার আকাশ হল কালচে
রোদ সরিয়ে ঝমঝমিয়ে মেঘগুলো জল ঢালছে।
চড় বড়া বড় বৃষ্টিফোঁটা, কড় কড়া কড় শব্দ
বুককাঁপানো মেঘের ডাকে ভয়ে সবাই স্তব্ধ!
বাতাস ছিল শান্ত তখন হঠাৎ হল ঝড়
কি কারণে রাগে এখন ফুঁসছে সে গর গর?
এ কি তবে কালবোশেখি? সে-ই এসেছে হয়তো!
সে তো আসে বিকেলবেলায়, সকালবেলায় নয় তো!
বর্ষাও নয়, তার আসারও হয়নি সময় আজ !
তবে কেন ঝড় বাদলের এমন রণসাজ ?
দিনকাল সব বদলে যাবে এমনটা কেউ জানত?
প্রকৃতিও বেপরোয়া আগে নিয়ম মানত।
সবাই কেন খামখেয়ালি? ঢুকছে না তা মাথায়,
অসময়ে ঝড়-বাদলের দৃশ্য চোখের পাতায়!
খরগোশ আর গিনিপিগ
প্রদীপ আচার্য
খরগোশ আর গিনিপিগে খুব বৈরী
ঝগড়া করার জন্য দু'জনেই তৈরি৷
খরগোশ বলে, খুদে খুদে তোর কান
আমার কান দুটো লম্বা ও টান টান
ছোট্ট হলেও আমার তো লেজ আছে
সবদিক দিয়ে হেরেছিস আমার কাছে৷
গিনিপিগ বলে, মুখটা খুলব নাকি?
আমি তো তবু ঘোঁত ঘোঁত করে ডাকি
তোকে যে বন্ধু বিধাতা দেছেন ফাঁকি
রা নেই মুখে, করিস না ডাকাডাকি৷
মানুষেরও তো লেজ নেই জেনে রাখ
লেজের বড়াই করিস না, চুপ থাক৷
বাংলার বর্ষা
সবিতা রায় বিশ্বাস
চারিদিক মেঘে ঢাকা
ঝমঝম বৃষ্টি
নদীজল ছল ছল
সুর বাজে মিষ্টি।
কদমের ডালে ডালে
ফুলেদের জলসা
ঝোপে ঝাড়ে থরে থরে
টক মিঠে ফলসা।
ঘরে ঘরে মাছভাজা
ইলিশের গন্ধ
ভালবাসে সব্বাই
নেই তাতে সন্দ।
বাংলার মাঠে ঘাটে
যেই নামে বর্ষা
হাসি ফোটে চাষীদের
বুকে বল ভরসা৷
কথা
নীলোৎপল ভট্টাচার্য
অনেক কিছু কথার মাঝে
একটি কথা চুপকথা
অনেক কথা রাখছে পুষে
বুকের ভেতর মৌনতা৷
সবাই থাকে সবার কাছে
আঁকড়ে থাকে মূলকথা
কথার গাছ আঁকশি করে
আকাশে ছোঁয় মৌনতা৷
কথার ঝড়ে কথা ওড়ে
মুখ খোঁজে নীল দিগন্তে
কারসাজি কার বুঝবে আজি
কথার চরণ অনন্তে ৷
কথায় বাড়ে অনেক কথা
একটি কথায় সবাই চুপ
কথার মাঝে মানুষ দেখে
উলুকঝুলুক অনেক রূপ৷
সত্যি কথা মিথ্যা কথা
অনেক কথা অনেক রকম
কথা মানেই অনেক কিছু
নয় তো শুধু বকবকম৷
ইচ্ছে খুশি
শঙ্খশুভ্র পাত্র
‘ইচ্ছেখুশি’-র বিষয় নিয়ে
যা পারি তাই লিখি,
দিনের বেলায় অবাক ব্যাপার
তারার ঝিকিমিকি…!
রাতদুপুরে সূয্যি হাসে
পুরো আকাশ জুড়ে,
একপলকের দমকা হাওয়ায়
উঠল নড়ে কুঁড়ে।
এসব দেখে লক্ষ্মীপেঁচার
ফুর্তি বাড়ে মনে
চুপটি করে বসেই থাকে
কোটরে, নির্জনে৷
বাঁকা চাঁদটি বনের মাথায়
মেঘের সাথে মিশে
হারিয়ে যাবে বলেই সেকি
পায় না খুঁজে দিশে!
ইচ্ছেখুশির রঙে এখন
মেতেই ওঠে তুলি,
জেগে থাকে আঁকার খাতা—
আঁধারে ঘুলঘুলি৷
পাঠকদের মন্তব্য
250