ছড়া-কবিতা
মায়ের ভাষা
কাজী মুরশিদুল আরেফিন
বাংলা আমার মাতৃভাষা
মায়ের কাছে শেখাI
হাতেখড়ির সময় প্রথম
অ আ ক খ লেখা।
তালপাতাতে লিখত দাদু
নানান রকম ছড়া
রবীন্দ্রনাথ নজরুলও
মাতৃভাষায় পড়া।
রফিক সালাম জব্বরদের
ভোলাতে চায় কারা?
বরকতরা ভাষার শহিদ
অমর আজও তারা।
পাখির দলও মাতৃভাষায়
কিচিরমিচির ডাকে,
হোকনা ওদের ভিন্ন ভাষা
গাছেই মিলে থাকে।
বাঘটা ডাকে হালুম হুলুম
ওই যে সোঁদরবনে,
শেয়াল শোনায় হুক্কাহুয়া
রাত্রে ক্ষণে ক্ষণে।
মাতৃভাষা কাড়বে কারা
হুকুম জারি করে?
ফেব্রুয়ারির একুশ-বরণ
মাতৃভাষার ভোরে।
আমার পুজো আমার ভাষা
অচিন্ত্য সুরাল
(সপ্তদশ শতকের কবি আব্দুল হেকিমকে স্মরণ করে)
"ওমা দ্যাখো পুরুতমশাই
কেমন যেন বিশ্রী ভাষায়
অং বং সব মন্ত্র পড়েন
বুঝতে পারি না যে !
বারণ করো, ওসব আমার
বিশ্রী লাগে, বাজে !!”
মা বললেন, "এমা ছি ছি
অমন কথা বলতে নেই
যেমন করে পড়তে হয়,
পড়ছেন তো সেইভাবেই !!”
"হ্রিং নমো আর ক্রিং নমো
বলতে বলতে সরস্বতীর
পায়ে ছুঁড়ছেন ফুল
কেমন করে বুঝবো সেসব
ঠিক বলছেন নাকি সবই ভুল !!”
মা বুঝিয়ে বলেন তাকে,
"সব কিছুরই নিয়ম থাকে
সেসব মেনে পুজো করতে হয়
না মানলে বিদ্যাদেবী
কেমন করে দেবেন বরাভয় !!”
“সরস্বতী ঘরের মেয়ে–
দাদু আমায় বলে।
তাই যদি হয় তাইলে কেন
শিখবে না ও আমার ভাষা,
যে ভাষাতে তোমার সঙ্গে
আমার কথা চলে ?”
এমন হলে কিন্তু আমি
চাই না নিতে সরস্বতীর নাম
তেমন পুজো চাই না আমি
যেই পুজোতে আমার ভাষার
নেইকো কোনো দাম !!
আমার ভাষা আমার যত গান
শিখে নিলেই হয়,
নিজেই আমি করব তখন পুজো
পরীক্ষাতে আর পাব না ভয় !!
বিদ্যেবোঝাই
আশিসকুমার মুখোপাধ্যায়
জানিই তুমি জানো
দাঁড়িয়ে আছে সূর্য কত
আলোকবর্ষ দূরে,
কিন্তু জানো-না তো
পাশেই নদী গাইছে কী গান
হাওয়ার সুরে সুরে।
এবং জানো আরও
এস্কিমো'দের ইগলু বাড়ি
বরফ দিয়ে ঢাকা,
জানো-না ঠিক তবে
কার যে হাতের ছোঁয়ায় এমন
সকালটি হয় আঁকা।
জানাই আছে জানি
প্রাচীন ভারতবর্ষে ছিলেন
মস্ত রাজা পুরু,
কিন্তু জানো-না ঠিক
শরৎ এলেই ছিঁচকাদুনে
বৃষ্টি কেন শুরু।
অনেক কিছুই জানো
দেশ-মহাদেশ এবং তাদের
নানান খুঁটিনাটি,
খোঁজ রাখো না তবে
কাদের জন্য ফসল ফলে
সোনাও হয় মাটি।
না-ই যদি তা জানো
জানবে তবে জানার তোমার
অনেক কিছুই বাকি,
এবং জেনে রেখো
ইচ্ছে করে নিজেই তুমি
নিজেকে দাও ফাঁকি।
এক ভাষা,দুই দেশ
পার্থপ্রতিম আচার্য
এই দেশে যে নদীর দেখা,
ওই দেশে সেই নদী,
ওই নদীতে নৌকা নিয়ে
যাই হারিয়ে যদি,
পৌঁছে যাব তোমার গাঁয়ে,
তোমারও যে ভাষা
ও ভাই আমারও সেই ভাষা।
ছদ্মবেশের দরকার নেই,
আমরা তো সব একই
অবাক হয়ে দুটি দেশের
শিশিরকণা দেখি।
বট-অশথের মুগ্ধ ছায়ায়
চিত্ত দাঁড়ায় ঘুরে–
দুটি দেশের ভূতল মেশে
একই সমুদ্দুরে।
দুই দেশে যায় মৌমাছিরা
শিউলি-বকুল ফুলে
দুই দেশে দিন-রাত্রি ঘোরে
রবীন্দ্র-নজরুলে ।
এই দেশে যে গানের চরণ
ওই দেশে তার ঝালা,
এই দেশে যে প্রাণের মাসি,
ওই দেশে সে খালা।
দুই দেশে এক সূর্য ও চাঁদ,
নিবিড় ভালোবাসা,
তোমারও যে ভাষা ও ভাই
আমারও সেই ভাষা।
স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবন দিলেন ঢেলে,
এখন কি আর দুই দেশেতে তাঁদের দেখা মেলে?
বুক কেটে দেশ দু ফাঁক করে মলিন স্বাধীন দেশে–
হাওয়ায়-হাওয়ায় ঠাম্মি-দাদার বিষন্নতা মেশে।
দুই নদীতেই ইলিশ মেলে, মুখ দেখা যায় জলে–
ধর্ম তো নয়, সর্ব প্রথম মর্মে মানুষ চলে।
আয় দেখি আয় দু’হাত ধরি মুক্ত আলোর আশায়–
দুই দেশে এক মেঘের লীলা, একই মায়ের ভাষায়।
কি মজা! কি মজা!
বিশ্বনাথ গরাই
পাশ ফেল উঠে গেছে, হরদম খেলি, ছুটি
তাতা ধিন ধিন ধিন,আমাদের পোয়াবারো;
যা-ই লিখি হিজিবিজি, আলফাল,কাটাকুটি
নম্বর পাবো ঠিক, দিদিমণি খুশি আরও!
মারধোর নেই আর, নেই চাঁটি কান মুলে
নীল ডাউনের কড়া হুকুমেতে দাঁড়ি আজ;
ছুটোছুটি, ঠুসোঠুসি, উড়ছি তো জামা খুলে
ওই আসে হেডস্যার, হুঙ্কার যেন বাজ!
তাই সবে বই খুলে সুর তুলি অংবং,
জানালা দরজা কাঁপে সে সুরের ধাক্কায,
‘দেখবি এবার মজা?’ হেডস্যার রেগে টং
আসলে ঢুলুনি তার মাঝপথে চমকায়!
ঢং ঢং ঢং ঢং ঠিক বেলা তিনটেয়
কী মজা!কী মজা ভাই, নিমেষে পগারপার!
দল বেঁধে সব্বাই যাব ঘুড়ি কিনতে
তারপরে মাঞ্জায় সুতো হবে ক্ষুরধার!
শীতের জ্বালায়
অমিত চট্টোপাধ্যায়
শীতে কেঁপে রাতভর চামচিকে প্যাঁচাতে,
পালা করে শুরু করে কী ভীষণ চেঁচাতে !
বলে, আন কম্বল, কান মাথা ঢাকি-রে,
লেপ ছাড়া এই শীতে ঠক ঠক কাঁপি-রে!
আমরা তো রাত জেগে দিই বন পাহারা
তারা থাকে মহা সুখে শীতঘুমে যাহারা।
পাতা বেয়ে টুপটাপ পড়ে শিলাবৃষ্টি,
গাছপালা সাদা হলো এ কী অনাসৃষ্টি!
কন কন করে বুক ফিক ব্যথা পাঁজরে,
সর্দিতে মাথা ভারী, পুড়ে যায় গা জ্বরে!
হাতি কাঁপে, বাঘ কাঁপে কনকনে শীতে
খোঁজে যদি কম্বল পাওয়া যায় ফ্রি-তে!
কে আছিস, কম্বল, সোয়েটার নিয়ে আয়,
বনবাসী পশুদের শীতে বুঝি প্রাণ যায়!!
পাঠকদের মন্তব্য
250