ছোটোদের চাঁদের হাসি / ছড়া - কবিতা / আগষ্ট ২০২৫

ছড়া-কবিতা

 

স্বাধীনতা

কাজী মুরশিদুল আরেফিন

 

ইভানের বাড়ি যেন

প্যাস্টেলে আঁকা

তিনরঙা পতাকার

মাঝখানে চাকা।

 

মিতুলের বন্ধুরা

সকলেই মিলে

সাজিয়েছে প্যান্ডেল

আজ তিলে তিলে।

 

মনীষীর ছবি আছে

মাঝে কবিগুরু,

জন গণ মন গান

উঠোনেতে শুরু।

 

স্বাধীনতা উৎসব

চলে গানে নাচে,

খাঁচা থেকে ছাড়া পেয়ে

পাখি ওড়ে গাছে।

 

পাখিটাকে ছেড়ে দিয়ে

খুব হাততালি,

শুভ বলে চলে যাই

গাছে জল ঢালি।

 

রিমি দিল দুটো করে

চকলেট হাতে,

স্বাধীনতা উৎসবে

সকলেই মাতে।

 

 

 

বারোমাসের ছড়া

বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী

 

বৈশাখে ঝড় আম পাকে

জ্যৈষ্ঠে কাঁঠাল জাম পাকে।

 

আষাঢ়ে মেঘ রথের যাত্রা

শ্রাবণ ধারা ছাড়ায় মাত্রা।

 

ভাদ্রে আগুন সূয্যিমামা

আশ্বিনে পাই পুজোর জামা।

 

কার্তিকে বোন দেবেন ফোঁটা

অঘ্রাণে ধান হচ্ছে কাটা।

 

পৌষে পায়েস পিঠা ও পুলি

মাঘের শীতে  চাদর খুলি।

 

ফাল্গুনে গাছ হাসছে ফুলে

চৈত্রে চড়ক ঢাকে ও ঢোলে।

 

ক্যালেন্ডারে ঘুরছে মন

বারোমাসে তেরো পার্বণ।

 

 

 

থাকি ভালো

উপাসনা পুরকায়স্থ

 

খুশিদের রাখি খামের ভেতরে পুরে

অবাক করা সে দেশের আমি রাজা,

রোদের-ফুলকি কুড়োই-যত্নে রাখি

জ্বালিয়ে আগুন প্রতিদিন হই তাজা।

পাখিদের গানে  জুড়াই প্রাণের জ্বালা

সোনার ফসল দুটি হাতে ছুঁয়ে যাই,

বনে জঙ্গলে মেলা বসে ফুলে ফুলে

কোথা পাবে বলো- ওখুশি কোথায় পাই।

ঘুড়িদের মতো আকাশেতে দেব পাড়ি

ডানা মেলে উড়ি সূয্যিমামার দেশে,

আঁধার নামলে তারার প্রদীপ জ্বলে

মেঘের ছানারা পাহাড় চূড়োয় মেশে।

মুঠো ভরে নিই- কুড়োই হিরের কুচি

জোছনা আলোয় মাঠঘাট পথ ভাসে,

ঝলমলে তারা-তাই দিয়ে মালা গাঁথি

শীত এলে হব শিশিরের কণা ঘাসে।

খুশিদের আমি খামেই রাখছি ভরে

এরাই জ্বালবে গহন আঁধারে আলো,

হাজারো স্বপ্নে কবিতায় প্রাণ জাগে-

ওরা আছে তাই-চিরকাল থাকি ভালো।

 

 

 

বৃষ্টিদিন

দীপংকর গোস্বামী

 

বৃষ্টিভেজা ঘাসে

ভরা শ্রাবণ মাসে

ব্যাংগুলো সব লাফিয়ে চলে

এ ওর পাশে পাশে।

 

অদূরে এক কোণে

সবুজ কচু বনে

উঁচিয়ে মাথা ছড়িয়ে পাতা

কচু হাসে নির্জনে।

 

চাতক সারে স্নান,

চাষিরা বোনে ধান,

পরাণ খুলে গায় মাঝি

ভাটিয়ালি গান।

 

কালো মেঘের সারি

আকাশে দেয় পাড়ি,

মন কেমন এক বৃষ্টিদিনে

দেখছি ছবি তারই।

 

 

 

সাগরপুরী

অর্ণব ভট্টাচার্য

 

সাতসাগরের জলের নিচে,

সাগররাজার বাড়ি,

ইচ্ছে হলে যখন তখন

আমিও যেতে পারি।

 

মায়াবী সেই প্রাসাদটিতে

কী আছে, নেই জানা?

স্কুইডখুড়ো, হাঙরখুড়ি,

আক্টাপাসের ছানা।

 

মুক্তোভরা ঝিনুক আছে,

আরো লাগে ভালো–

অন্ধকারে যখন জ্বলে

জেলিফিশের আলো।

 

প্রবাল দিয়ে তৈরি টেবিল

নানান খাবার তাতে,

সাগরপুরীর ডলফিনেরা

বসেন খেতে রাতে।

 

কি করে যাই সেই দেশেতে?

জাহাজ করে বুঝি?

মোটেই তা নয়, ঘুমিয়ে গেলে

কল্পনাতেই খুঁজি।

 

 

 

বর্ষা এল

শ্যামাচরণ কর্মকার

 

পায় না খুঁজে রোদের দেখা আকাশ মেঘে ছাওয়া

ঝিরঝিরিনি বৃষ্টি এল সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া।

বর্ষা তবে এল নাকি বৃষ্টির হাত ধরে?

সকাল থেকেই টিপ টিপ টিপ, যাচ্ছে কেবল ঝরে।

 

গাছের ডালে ভিজছে পাখি ঠোঁটে খুশির গান

গাছ-পাতা-ঘাস বৃষ্টিজলে নিচ্ছে সেরে চান।

বৃষ্টিখুশি ছড়িয়ে পড়ে ব্যাঙ-ব্যাঙানির মনে

‘গ্যাঙড় গ্যাঙড়’ গান গেয়ে যায় জলসা জলায় বনে।

 

বৃষ্টি পেয়ে পথও খুশি আর খুশি মাঠঘাট

এদিক সেদিক জল চিক চিক বুকে খুশির হাট।

চাষীর মুখে হাসির ঝিলিক বৃষ্টিঝরা দেখে

প্রাণ পেয়েছে শুকনো মাটি কী খুশি জল মেখে।

 

পাড়ায়-ঘরেও খুশির ছোঁয়া বর্ষাদিনের গান

গন্ধ ভাসে ইলিশভাজার আর খিচুড়ির ঘ্রাণ।

টুপ টাপ টুপ, টাপুর টুপুর বৃষ্টি সারাদিন

রোদ নিয়েছে আজকে ছুটি বর্ষা বাজায় বীণ।

 

শহর খুশি, গ্রামও খুশি, বৃষ্টি ভালোবাসি

বর্ষা বলে, প্রাণ জুড়োতে তাই না আমি আসি!

বৃষ্টি মিঠে, বর্ষা মিঠে, মিঠে জলের সুর

বর্ষাদিনের গন্ধ খোঁজে আমার ছড়াপুর।

 


পাঠকদের মন্তব্য

দীপ রায় লিখেছেন... ১০ই আগষ্ট, ২০২৫
খুব সুন্দর ছড়া গুলো
অমিত চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন... ১০ই আগষ্ট, ২০২৫
এক নিঃশ্বাসে সবকটি ছড়া পড়ে ফেললাম প্রত্যেকটি ছড়াই অতুলনীয়। ধন্যবাদ ছোটদের চাঁদের হাসি।
রাজর্ষি মন্ডল লিখেছেন... ২০শে আগষ্ট, ২০২৫
ছড়াগুলো ভারি সুন্দর।

আপনি কি এই লেখায় আপনার মন্তব্য দিতে চান? তাহলে নিচে প্রদেয় ফর্মটিতে আপনার নাম, ই-মেইল ও আপনার মন্তব্য লিখে আমাদের পাঠিয়ে দিন।
নাম
ই-মেইল
মন্তব্য

250

    keyboard_arrow_up